উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার ঘোষণা করে নির্বাচনী ইশতেহার

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনী ইশতেহারে উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে উপকূলবাসীর ইশতেহারশীর্ষক জাতীয় উপকূলীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তারা এ ঘোষণা দেন।

উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স এবং পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্কপ্রানআয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির সদস্য শেখর দত্ত, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারান সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য মানবেন্দ্র দেব, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তফা আলমগীর রতন ও সাব্বাহ আলী খান কলিন্স উক্ত সংলাপে অতিথি হিসেবে উপস্তিত ছিলেন

সংলাপে প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ওয়াটারকিপার-বাংলাদেশ সমন্বয়ক শরীফ জামিল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর মুহাম্মদ আলী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ প্রমুখ। , অ্যাকশন এইড ম্যানেজার নাজমুল আহসান, প্রিন্সিপাল আকমল হোসেন, কাপ প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহবুবুল হক প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লিডার্সএর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাণের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ।

সংলাপে উত্থাপিত দাবিতে বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলকে বিশেষ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এলাকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে প্রতি অর্থ বছরে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। নিরাপদ পানীয় জলের স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে একটি বাড়ি একটি খামারপ্রকল্পের আদলে উপকূলীয় অঞ্চলে একটি বাড়ি একটি আশ্রয়কেন্দ্রকর্মসূচি চালু করতে হবে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গাছ লাগিয়ে উপকূলে সবুজ বেল্ট গড়ে তুলতে হবে। স্থায়ী ও মজবুত বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করতে হবে।

সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার একটি রাজনৈতিক দলের লিখিত দলিল। এবারের ইশতেহারে জলবায়ু ইস্যু লিপিবদ্ধ হলে তা হবে বড় অর্জন। যারা ক্ষমতায় আসবে তারা ইশতেহার কতটা বাস্তবায়ন করেছে সেটাও দেখা হবে। বিরোধী দলগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

সংলাপে উত্থাপিত দাবিগুলোর সঙ্গে ঐক্যমত প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ নেতা শেখর দত্ত বলেন, সারাদেশের সমন্বিত উন্নয়ন বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে পুরো উপকূলীয় অঞ্চল দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। টেকসই বাঁধ নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি ভবিষ্যতে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ইশতেহারে উপকূলের জন্য একটি পৃথক অনুচ্ছেদ উল্লেখ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুশীল শুভ রায় বলেন, যারা ক্ষমতায় থাকে তারাই বিরোধী দলের পরামর্শকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের ইশতেহার বাস্তবায়ন করে। তাই জনগণের স্বার্থে সরকারকেও বিরোধী দলের পরামর্শ বিবেচনা করা উচিত। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় একটি আঞ্চলিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেভাবে মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য ব্যাহত হচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ। আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দক্ষিণাঞ্চলের জন্য হুমকিস্বরূপ। এতে পরিবেশ ও প্রকৃতিতে নানা সমস্যা দেখা দেবে। আগামী কয়েক বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। তাই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল রক্ষায় এসব প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। এছাড়া সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুতদের রক্ষা করতে হবে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেন, জলবায়ু তহবিল সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না।

সংলাপের মূল প্রবন্ধে মোহন কুমার মণ্ডল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা খুবই নগণ্য হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় মানুষ। ভৌগোলিক অবস্থা, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভঙ্গুর অবকাঠামো, দীর্ঘমেয়াদি লবণাক্ততা ইত্যাদি কারণে সমগ্র উপকূলীয় এলাকার মানুষ জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি ও বাসস্থানের সংকটে রয়েছে। জীবন ও জীবিকার সন্ধানে উপকূল ছাড়ছে মানুষ।

এ সংকট উত্তরণে উপকূলের প্রান্তিক মানুষ, সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছেন। দীর্ঘমেয়াদি এই সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষ জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে বরাবরই বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্যের অবসানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ঘোষণা প্রত্যাশা করছে জনগণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.