কালাইয়ে বেঁধে দেওয়া দরে আলু বিক্রি না করার কৌশল সেড ফাঁকা, হিমাগারে আলু ভরপুর

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরের নরওয়েস্ট হিমাগার ৮৫ হাজার বস্তার ধারণ ক্ষমতা।

সরকার বেঁধে দেওয়া দরে হিমাগারগুলোতে আলু বিক্রি হচ্ছে কি না তা তদারকি করছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর।

এ উপজেলার বিভিন্ন হিমাগারে আলু ক্রয়-বিক্রয় হলেও বন্ধ ছিল কালাই পৌরশহরের নরওয়েস্ট হিমাগারে। শুধু তাই নয়, ফাঁকা ছিল সেড। হিমাগারের মূল ফটকে ঝুলছিল তালা। অথচ এখনও হিমাগারে মজুত আছে ৩৬ হাজার ৭০০ বস্তা আলু। এমন দৃশ্য দেখে হতবাক বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।

তবে হিমাগারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা যদি তাদের আলু বিক্রি না করে, তাহলে হিমাগার কর্তৃপক্ষের করার কী আছে। আমরা সর্বোচ্চ ব্যবসায়ীদের তালিকা দিতে পারি। এর বাহিরে করার কিছুই নেই। আর ভোক্তা অধিকারের দাবী, আগামী ২/১ দিনের মধ্যে বেঁধে দেওয়া দরে আলু বিক্রি শুরু করতে হবে। তা না করা হলে হিমাগার সিলগালা করে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে আলু বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের নিকট টাকা পৌছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে হিমাগার গেটে পাইকারি ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে আলু ক্রয়-বিক্রি হচ্ছে। সেই আলু খুচরা বাজারে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার হিমাগার গেটে আলু পাইকারি সর্বোচ্চ ২৭ টাকা কেজি বিক্রির জন্য দর বেঁধে দেয়। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া দর মানছেন না ব্যবসায়ীরা।

এমনকি প্রশাসনের বাজার তদারকি জোরদার হওয়ায় হিমাগারগুলোতে আলু ক্রয়-বিক্রি বন্ধ রয়েছে। কালাই উপজেলার বেশ কয়েকটি হিমাগারে বাজার তদারকি করতে যান।

বগুড়া আঞ্চলিক ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকারের সহকারি পরিচালক ইফতে খারুল আলম ।

এ সময় নরওয়েস্ট হিমাগারে আলু ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ ছিল। সেড ফাঁকা এবং হিমাগারের মুল গেটে তালা ঝুলছিল। এমন দৃশ্য দেখে অবাক ভোক্তা অধিকারের লোকজন।

এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বিগত বছরের লোকসানের ভার থেকে আজও মুক্ত হতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকের ঋণ আজও জট বেঁধে আছে। প্রশাসনের চাপাচাপির কারণেই ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছে। তাছাড়া হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সময়ও আছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি ঘটে।

নরওয়েস্ট হিমাগারের ব্যবস্থাপক মুক্তার হোসেন বলেন, ৮৫ হাজার বস্তার ধারন ক্ষমতা এই হিমাগারে। এ পর্যন্ত সংরক্ষণ আছে ৩৬ হাজার ৭০০ বস্তা আলু। বেঁচা-কেনা বন্ধ এবং সেড ফাঁকা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেদিন থেকে আলুর দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেদিন থেকেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি না করলে আমাদের করার কি আছে। আলু বিক্রি বন্ধ থাকায় সেড ফাঁকা পড়ে আছে। তাছাড়া আলু সংরক্ষণের মেয়াদও আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত আছে। সে কারনে আমরা ব্যবসায়ীদের চাপও দিতে পারছি না।

বগুড়া আঞ্চলিক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারি পরিচালক ইফতে খারুল আলম জানান, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারনেই মুলত আলুর দাম এত বেশি। হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান আলু সংরক্ষণ রয়েছে। এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে। সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা কেজির বিপরীতে বেশি দরে আলু বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

প্রথম পর্যায়ে জরিমানাসহ তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নরওয়েস্ট হিমাগারে আলু ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংরক্ষিত আলুর ব্যবসায়ীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.