কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এসিড নাটকে মামলা দায়ের

এ আর রাকিবুল হাসান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে বিপাকে পরেছে এক ভুক্তভোগী। আপন পরিবারের লোকজন তাকে ফাঁসাতে গিয়ে সাজিয়েছে মিথ্যা এসিড নিক্ষেপের ঘটনা। পাশাপাশি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকে তাকে হেনস্তা ও কোনঠাসা করার চেষ্টা করছে পক্ষটি। প্রভাবশালী একটি মহল এই মিথ্যা নাটকের ঘটনায় প্ররোচনা দেয়ায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি এখন মামলার ভয়ে দিশেহারা।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের নাপিত পরিবারের তিন ভাই নিরোধ চন্দ্র শীল, লক্ষণ চন্দ্র শীল ও বাদল চন্দ্র শীল ওই ইউনিয়ন সংলগ্ন পুরাতন অনন্তপুর বাজারে আলাদাভাবে নাপিতের ব্যবসা করেন। লক্ষণ চন্দ্র শীল মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ভাই নিরোদ চন্দ্র শীলের কাছে বিগত ২০১৬ সালে দেড় লক্ষ টাকা নেন। এসময় বাদল চন্দ্র শীল লক্ষণ চন্দ্র শীলের পক্ষ নিয়ে টাকার বদলে দুই ভাই জমি লিখে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। পরে প্রতারিত হয়ে ফিরে আসেন লক্ষণ চন্দ্র শীল। তিনি ফিরে আসার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা বা জমি লিখে দেয়ার বিষয়ে গড়িমশি করতে থাকে অপর দুই ভাই। এনিয়ে বিচার শালিস করেও অর্থ ফেরৎ না পেয়ে গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মঙ্গল চন্দ্র শীল ও বাদল চন্দ্র শীলের নামে মামলা করেন নিরোধ চন্দ্র শীল। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠায় বাদল চন্দ্র শীলের বিধবা মেয়ে স্বরসতী রানীকে (৩২) এসিড নিক্ষেপের অভিযোগ তুলে উলিপুর থানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর মামলা করেন স্বরসতী রানী।

হাতিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রব রানু জানান, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ মেটাতে আমি কয়েকবার ওই তিন পরিবারের সাথে সালিশ বৈঠক করেছি। দুই ভাই একদিকে থাকায় অপর ভাইটি একটু বেকায়দায় রয়েছে। উলিপুর থানা থেকে তদন্ত করে এসিড নিক্ষেপের ঘটনাটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় মামলাও আইও চুড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেছেন।
পুরাতন অনন্তপুর বাজার এলাকার অধিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান ও আব্দুল মজিদ জানান, গ্রামের সবাই জানে এটি একটি মিথ্যে মামলা। এসিড নিক্ষেপের ঘটনাটি সাজানো। আমরা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সেটা জানিয়েছি। অভিযুক্ত স্বরসতী রানীর বাবা বাদলচন্দ্র শীল জানান, জমিজমা নিয়ে প্রতিবাদ করায় আমার মেয়ের উপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ভাগ্যগুণে আমার মেয়ের মুখমন্ডল রক্ষা পেয়েছে। পুলিশ একতরফাভাবে রিপোর্ট দিয়েছে। আমরা নারাজী দেয়ায় মহামান্য আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব প্রদান করেছে।

স্বরসতী রানী জানান, পৈত্রিক ভিটা নিয়ে বিরোধের জেরে আমার কাকা নিরোধ চন্দ্র শীল ও তার লোকজন আমাকে পঙ্গু করার উদ্দেশ্যে রাতের অন্ধকারে এসিড নিক্ষেপ করেছে। আমি এই জঘন্য ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নিরোধচন্দ্র শীল জানান, আমার ভাই লক্ষণ মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে দেড় লাখের উপরে টাকা কর্জ নিয়েছে। বড় ভাই বাদলচন্দ্র টাকার বিনিময়ে পৈত্রিক জমি লিখে দিবেন বলে কথা দিলেও তারা টাকাও দিচ্ছে না, জমিও লিখে দিচ্ছে না। প্রতিকার চেয়ে আমি থানায় মামলা দায়ের করলে আমাকে উল্টো ফাঁসাতে এসিড নিক্ষেপের মামলা করেছে। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

বিষয়টি নিয়ে হাতিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন মাস্টার জানান, এসিড নিক্ষেপের মামলাটি সম্পূর্ণ সাজানো। ভিকটিম যেভাবে এসিড দগ্ধ হয়েছেন বলে দেখাচ্ছেন সেটাও পূর্ব পরিকল্পিত। বাদলচন্দ্র ও লক্ষণচন্দ্র পাওনা টাকার বিপরীতে জমি লিখে না দেয়ার জন্য এসব করছে তারা। এলাকার মানুষ জানে সত্যি ঘটনা কি। এখন তারা অর্থ ব্যয় করে সাংবাদিক ডেকে এনে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পুলিশী তদন্ত হয়েছে। সিআইডিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সত্য বেরিয়ে আসবে।

এ ব্যাপারে উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মর্ত্তুজা জানান, ঘটনাটি আমার আসার আগে ঘটেছে। এ ব্যাপারে পুলিশী তদন্তও হয়েছে। তখন ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট প্রদান করে। পরে বাদী নারাজি দাখিল করলে বিজ্ঞ বিচারক এ মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব প্রদান করেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.