জয়পুরহাটে আখের অভাবে বন্ধের পথে চিনিকল

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ  দেশের বৃহত্তম চিনিকল জয়পুরহাট সুগার মিলটি পর্যাপ্ত কাঁচামালের আখের অভাবে বন্ধের পথে চিনিকলটি । উচ্চমূল্যের তিন ফসল উৎপাদন, আখের দাম কম, আখ চাষে সময় বেশি ও টাকা উত্তোলনে নানা ভোগান্তির কারণে জয়পুরহাটে আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা । এতে আখ না পেয়ে জেলার একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান জয়পুরহাট সুগারমিলটি চার শো কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে এখন বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। মিলটি অল্প সময় চালু থাকায় অনেক শ্রমিক-কর্মচারী খুবই কষ্টে জীবন যাপন করছেন।

আখ চাষ করতে ১২-১৪ মাস সময় লাগে। একই সময়ে অন্যান্য তিনটি ফসল চাষে লাভ বেশি। আবার আখের দাম কম এবং টাকা উত্তোলনে নানা ভোগান্তির কারণে জয়পুরহাটে আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এখানকার চাষীরা।

জয়পুরহাট সুগার মিল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬০ সালে ২১৬ একর জমি নিয়ে ২৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় জয়পুরহাট চিনিকলটি । চিনি উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। এরপর থেকেই এ জেলা ও আশপাশের জেলায় চাষীরা ব্যাপক আখ চাষ করতেন। চিনি উৎপাদনে এই সুগার মিলটি এখনো দেশে শীর্ষে।

একসময় সুগার মিলটি ৪ থেকে ৫ মাস চললেও বর্তমানে আখ চাষ কম হওয়ায় গেল মৌসুমে মাড়াই কার্যক্রম চলেছে মাত্র ১৯ দিন। অল্প সময় মিলটি চলার কারণে সিজনভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। আশঙ্কা করছেন দেশের অন্য সুগারমিলের মতো এই মিলটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

আরও জানা যায়, মিলটি বেশি দিন চালু ও টিকিয়ে রাখার জন্য সুগারমিল কর্তৃপক্ষ চাষীদের নানা রকম প্রশিক্ষণ, সহযোগিতা ও প্রণোদনা দিলেও বাড়ছে না আখ চাষ। ১৮০ টাকার পরিবর্তে দাম বাড়িয়ে ২২০ টাকা প্রতি মণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আখ চাষিদের প্রতি একর জমিতে সার, বীজ, সেচে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ দিচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ১ হাজার ৬০০ একর জমির জন্য ২ হাজার ২০০ আখচাষিকে ৪২ লাখ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসবে বাড়ছে না আখ চাষ।

জেলায় এবার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে ১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ১৯২ মেট্রিক টন চিনি। সুগারমিলের চিনির দাম খোলা প্রতি কেজি ১০০ ও প্যাকেট ১০৫ টাকা। এর আগে ৩৩৫ কোটি টাকা লোকসান ছিল মিলটির। গত মৌসুমে সুগারমিলটির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪০০ কোটিতে।

জয়পুরহাটের দোগাছী, গাড়িয়াকান্ত, পাঁচবিবির সমসাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার আখচাষি ও কৃষক শফিকুল, মোখলেস, শামছুল, রতন, মর্জিনা, বিউটি বলেন, ধান, আলু, সরিষা, পাট, বেগুন, পটোল ও অন্যান্য সবজি চাষ করলে ফসল তোলামাত্র হাট-বাজারে বিক্রি করলে তারা সঙ্গে সঙ্গে টাকা পান। বছরে ৩ থেকে ৪টি ফসল হয়। আর আখ চাষ করলে ১২ থেকে ১৪ মাস সময় লাগে এবং দাম কম, সেই আখের টাকা ডবলার ও মোবাইলের মাধ্যমে অনেক দিন পর দেয়। তারা ফসল বিক্রি করে সঙ্গে সঙ্গে টাকা নেবেন অন্য ফসলের মতো। এ জন্য তারা আখ চাষ করেন না।

জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা বলেন, মিলটি কখন যে বন্ধ হয়, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখলাছুর রহমান বলেন,আগামী মৌসুমে জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি । সময় মতো কৃষকদের মাঝে সার বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ করছি ।আশা করছি এবার রেকর্ড পরিমাণ আখ চাষ হবে ।আখের মূল্য মিলগেট থেকে সরাসরি কৃষকদের মাঝে পরিশোধ করতে পারব । এজন্য আগে থেকে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.