শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, স্টাফ রিপোর্টারঃ নওগাঁর সাপাহারের তিলনী সরলী দাখিল মাদ্রাসায় এমপিও ভুক্তির আগের শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নতুন ভাবে অন্যদের বেতন করানো সেই সুপারিন্টেন্ডেন্ট মোঃ ফিরোজ হোসেন এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এর আগে তদন্তের চিঠি করলেও তার ছেলের চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন বলে সময়ের আবেদন করেছিলেন তিনি। এরপর গত রবিবার আবারও তদন্তের জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ জাকির হোসেন। তিনি তদন্তের জন্য আগামী মঙ্গলবার বিকেলে তার নিজ কার্যালয়ে দু’ পক্ষকে উপস্থিত হতে বলেছেন।
জেলা প্রশাসকের অফিস সূত্রে জানা যায়, এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তদন্তের দিন ধার্য করে ১১ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ জাকির হোসেন চিঠি করেন। চিঠি প্রাপ্তির পর অভিযুক্ত সুপার তার ছেলে অসুস্থ, তাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার কথা বলে সময়ের জন্য আবেদন করেছিলেন। এরপর আগামী মঙ্গলবার ১০ অক্টোবর তদন্তের দিন ধার্য করে গত সোমবার ২ অক্টোবর আবারও পূর্বের স্মারক নাম্বারে চিঠি প্রেরণ করা হয় এবং ঐ চিঠি দু’ পক্ষকে পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্যাহ আল মামুনকে বলা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০২২ সালে এমপিও ভুক্ত হয় মাদ্রাসাটি। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বিনা বেতনে যেসব শিক্ষক-কর্মচারীরা নিঃস্বার্থভাবে শ্রম দিয়ে তিল তিল করে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের মধ্যে ৩ জন শিক্ষককে বাদ দিয়ে বিধি-বহির্ভূতভাবে বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অন্য ৩ জনের নামে এমপিও করিয়েছেন মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মোঃ ফিরোজ হোসেন। গত ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এ পূর্বের শিক্ষকদের তথ্য আপলোড করা হয়। ২০২২ সালে মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর নতুন করে পূর্বের শিক্ষকদের বাদ দিয়ে ৩ জনের নাম দেন এবং তাদের বেতন করিয়ে দেন মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট। এমপিওভুক্তির পূর্বের শিক্ষকগণ করোনার সময় সরকারি অনুদান পেয়েছেন। এমনকি তারা ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে পোলিং অফিসার হিসেবে ভোট গ্রহণও করেন। এরপরও তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের এমপিও করানোয় স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলেন, দূর্ণীতিবাজ সুপার আমাদেরকে বাদ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ৩ জন শিক্ষকের বেতন করিয়েছেন। এবিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিলে, জেলা প্রশাসক স্যার তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) স্যারকে দায়িত্ব দেন। স্যার তদন্তের জন্য চিঠি পাঠালে সুপার কৌশলে সময়ের আবেদন করেন। সেখানে তিনি তার ছেলে অসুস্থ তাকে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন, কিন্তু তার ছেলে অসুস্থ নয় এরং তিনি এপর্যন্ত তার ছেলেকে নিয়ে দেশের বাহিরে যায়নি। তিনি জেলা প্রশাসক স্যারকে ধোকা দিয়েছেন এবং নিয়মিত ভাবে মাদ্রাসায় যাচ্ছেন।
এবিষয়ে জানতে মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মোঃ ফিরোজ হোসেন এর মুঠোফোনে সংবাদকর্মী কল দিলে তিনি গাড়িতে আছেন বলেন এবং গাড়ি থেকে নেমে কল করতে চেয়ে তিনি মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ নাঈম হোসেন বলেন, মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট তার ছেলেকে নিয়ে ভারতে যাননি। তার ছেলেকে দেশেই চিকিৎসা করাচ্ছেন এবং তিনি নিয়মিত মাদ্রাসায় যাচ্ছেন।
পুনরায় পাঠানো তদন্তের চিঠি পৌঁছানোর সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) স্যারের পাঠানো চিঠি পাওয়ার পর পরই মাদ্রাসার প্রধানকে ও অভিযোগকারী শিক্ষকদেরকে সেই চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।