উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: অশ্লীল ভিডিওর ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাসের দেহরক্ষী আনসার সদস্য আকাশ বিশ্বাসকে (২৭) গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার (১৫ মার্চ) লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারকৃত আকাশ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর গ্রামের মৃত নিহার বিশ্বাসের ছিলে। গত দুই বছর ধরে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করছিলেন।
জানা গেছে, লোহাগড়ার ইউএনও অনিমেষ বিশ্বাসকে অশ্লীল ভিডিওর ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন অজ্ঞাত চাঁদাবাজ। এ ঘটনায় ইউএনওর স্ত্রী বিপাশা বিশ্বাস চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে লোহাগড়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই মামলার সূত্র ধরে ইউএনওর ওই দেহরক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইউএনও অনিমেষ বিশ্বাসের স্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ইউএনওর দাবি, তার স্ত্রীর করা চাঁদাবাজি মামলার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তাকে মামলার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
অভিযুক্ত দেহরক্ষী আকাশের ভাই সমার বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা হোক। তাতে যদি আকাশ অপরাধ করে থাকে, তবে তার শাস্তি হোক। কিন্তু সে যদি অন্য কোনো আক্রোশের শিকার হয়ে এ মামলায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে প্রশাসন ও সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই সঠিক তদন্ত করে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, একটি চাঁদাবাজি মামলায় সম্পৃক্ততার কারণে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে জানতে পেরেছি, তিনি আনসার সদস্য ও ইউএনওর দেহরক্ষী। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হবে। এ ছাড়া চাঁদাবাজ চক্রকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
মামলা বিবরণে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যবহৃত নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে কল করে জানান, একটি অশ্লীল ভিডিও আছে, যেটির জন্য ১০ লাখ টাকা না দেয়া হলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেয়া হবে। একাধিকবার অজ্ঞাতনামা চাঁদাবাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর মুঠোফোনে হুমকি দেন। ভয়ে বিপাশা বিশ্বাস তার স্বামীর সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তায় পর্যায়ক্রমে হুমকিদাতার ব্যাংক একাউন্টে ৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা দেন। হুমকিদাতার নির্দেশনায় টাকা পাঠানোর দিনে ইউএনওর গাড়িতে থাকা তার দেহরক্ষী আনসার সদস্য আকাশ পরামর্শ দেন ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে একাউন্টে টাকা পাঠানো যায়।
এ কথার সূত্র ধরে আনসার সদস্য আকাশকে সন্দেহ করেন ইউএনওর স্ত্রী।
পরে গত সোমবার (১১ মার্চ) বিকেলে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে ছুটি শেষে কাজে যোগদানের উদ্দেশে আকাশ লক্ষীপাশা বাসস্ট্যান্ডে নামলে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর মঙ্গলবার (১২ মার্চ) মামলা রজুর মাধ্যমে পরদিন বুধবার (১৩ মার্চ) গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।