শৈহ্লাচিং মারমা, রুমা প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের রুমায় গাছ চোরের অভিযোগে দা দিয়ে কুপায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতের ব্যক্তির নাম সিমিয়ন ত্রিপুরা(৪০)।
সে রুমা সদর ইউপির রুমা সেনা জোন সংলগ্ন রয়েল পাড়া বাসিন্দা। রয়েল পাড়াবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় ২৭সেপ্টম্বর সকালে সিমিয়ন ত্রিপুরা ও তার প্রতিবেশি তিনজন মিলে জঙ্গলে গাছ কাটতে যায়।
আহতের বড়ভাই অজিরাং ত্রিপুরা বলেন ওইদিন (২৭সেপ্টম্বর) সাড়ে সকাল নয়টার দিকে তার ভাই সিমিয়ন ত্রিপুরা গাছ কাটতে গিয়ে দা’য়ের কুপে গুরুত্বর আহত হবার খবর আসে। সিমিয়নের সঙ্গে সকালে কাজে বের হওয়া ও রয়েল পাড়া বাসিন্দা প্রদীপ ত্রিপুরা(২৪) ও বাথুহা ত্রিপুরা (৫৩) তার ভাইয়ের আততের খবর প্রথম তাকে জানিয়েছিলেন। পরে পাড়াবাসীর সহযোগিতায় আহত সিমিয়নকে উদ্ধার করে প্রথমে রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। ঘাড়ে ও হাতেসহ বিভিন্ন স্থানে দা কুপের আঘাতের অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে উন্নত চিকিৎসার নিতে জেলা সদর বান্দরবানে পাঠানো হয়। আবার বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে প্রেরন করা হয়। বর্তমানে চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সিমিয়ন ত্রিপুরা।
অজিরাং বলেন চিকিৎসার জন্য টাকা পয়সা সংগ্রহের কাজে দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্থ ছিলেন। তবে ঘটনার সাথে সাথে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমাকে মোবাইলে কল করে সামাজিকভাবে আলোচনায় বসে ভাইয়ের চিকিৎসা ব্যবস্থার অনুরোধ জানিয়েছিলাম।
রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা বলেন আহতের ব্যক্তির বড়ভাই অজিরাং ত্রিপুরাস পাড়ার লোকজনের আবেদনে চোরের অভিযোগে দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করার সংঘটিত ঘটনা নিয়ে তাঁর ইউনিয়ন কাযালয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে উভয় পক্ষের লোকজনের উপস্থিত ও সম্মতিতে আলোচনায় বসা হয়েছে।
এতে আহত সিমিয়ন ত্রিপুরার বড়ভাই অজিরাং ত্রিপুরা মামলা না করার কথা জানিয়ে আহত ভাইয়ের সুচিকিৎসা বন্দোবস্ত করতে বিনীত অনুরোধ করেন। পরে উভয় পক্ষের সম্মতিতে সুচিকিৎসার বাবদ দুই কিস্তিতে এক লক্ষ টাকা প্রদানে রাজি হয়- বিবাদীপক্ষ। তবে সামাজিকভাবে সালিশি এ বৈঠকে আক্রমণকারী ও আহত ব্যক্তি দুইজন-ই অনুউপস্থিত ছিলেন ।
এদিকে জানতে চাইলে বাগান মালিক ও হামলাকারী মংমুই মারমা(৫৪) মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের কাছে দা দিয়ে কুপ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। মংমুই মারমা বলেন আমার অতি কষ্টের সৃজন করা বাগান থেকে সিমিয়ণ ত্রিপুরা ও তার দল চুরি করে সেগুনসহ বিভিন্ন গাছ নিয়ে যেত। এটা নিয়ে খুব অতীষ্ঠ ছিলাম। বেশ কয়েকবার হাতে নাতেও ধরা পরেছিল। পার্শ্ববতী ও খুব চেনা জানা হওয়ায় শতর্ক করিয়ে রাখছিলাম সিমিয়নকে। সেও মৌখিকভাবে বারবার ওয়াদা করেছিলেন যে, আর বাগান থেকে গাছ চুরি করবেনা। কিন্তু তার ওয়াদা রক্ষা করেনি। বুধবারে (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ক্রেতা সওদাগরকে নিচ বাগানে গিয়ে যখন তিনজনকে গাছ কাটা অবস্থায় দেখতে পাই, তখন আমার (মংমুইমারমা) মাথা এমনিতে আর ঠিক থাকছিল না।
কেন কাটছো? এ প্রশ্ন করলে, পাল্টা আমার উপর তেড়ে ওঠে। তাই হাতে যা আছে তা দিয়ে আঘাত করেছি। তবে তিনি এঘটনায় ঘর থেকে পালাবেনা বলে সাফ জানিয়ে বলেন গাছ চোর সিমিয়ন মামলা করলে আইনি লড়াইয়ে মোকাবেলা করবার প্রস্তুত আছি। আর সামাজিকভাবে আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্ত চিকিৎসার জন্য আহত সিমিয়ন ত্রিপুরাকে নগদ অর্থ প্রদান বিষয়ে অভিযুক্ত মংমুই মারমা বলেছেন আমাকে যদি সিমিয়ন চিকিৎসার খরচ দিতে হয়। তবে সে সুস্থ হলে আমার বাগান থেকে বিভিন্ন সময় চুরি করা সব গাছের মূল্য তাকে পরিশোধ করতে হবে বলে দাবি করেন মংমুই মারমা।
অন্যদিকে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার সময় আহত সিমিয়ন ত্রিপুরার সাথে আরও দুইজন শ্রমিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একই ভাবে হামলাকারী মংমুই মারমার সঙ্গেও দুইজন ছিল। ঘটনার সময় এই চারজন প্রথমে দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে।
আহত সিমিয়ন ত্রিপুরা সাথে থাকা বাথুহা ত্রিপুরা ও প্রদীপ ত্রিপুরা বর্ণনার ভাষ্য মতে, ওইদিন নিজ নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। সকালে তাদের ঘরে উপস্থিত হয়ে সিমিয়ন বললেন যে, এদিন তার সাথে লাকড়ি কাটতে, দৈনিক ৭০০টাকা পাবে। অনুনয় করে বলায় সকাল আটটার দিকে কাজে বের হয়। চলে যায় একটি বাগানে। কাটতে বলা হয় গাছ। সিমিয়ন এর কথা অনুযায়ী আমরা দুইজনও গাছ কাটছিলাম। তবে কার বাগান জানতামনা। সাড়ে আটটার দিকে হামলাকারী মংমুই মারমা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তার হাতে ধারালো দা ছিল।
তার সাথে আরও দুইজন ছিল। ওই দুইজনের হাতে দা বা লাঠি কিছু ছিলনা। আসা মাত্র উত্তেজিত হয়ে মংমুই মারমা একাই সিমিয়নের উপর দা দিয়ে কুপাতে শুরু করে।
এলোপাতাড়ি কুপাতে দেখে সিমিয়ন এর সঙ্গে শ্রমিক বাথুহা ত্রিপুরা ভয় পেলেও কথা বলে মংমুইকে আক্রমন না করার অনুরোধ করেন। এতে কোনো কাজ হয়নি।
এসময় আহত সিমিয়ন ত্রিপুরাও হাত জোর করে মংমুই মারমা কাছে মাফ চান। এসময় হামলাকারী আরো এলোপাতাড়ি কুপায়। মংমুই মারমা সঙ্গে যাওয়া মংখ্যাইং মার্মা মংমুইকে ধরে থামানোর চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তি ও ঠেলা ঠেলিতে হামলাকারী মংমুই মারমার হাত থেকে দা’টি ছিটকে সরে যায়। ততক্ষণে সিমিয়ন ত্রিপুরার শরীরে স্থানে দা’র আঘাতে গুরুত্ব আহত হয়ে মাটিতে নুয়ে পড়েছিল।
রুমা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি- তদন্ত) আ্ববুল কাসেম বলেন হামলা শিকার আহত ব্যক্তির পক্ষে যে কেউ থানায় এসে মামলা করতে আসলে মামলা নেয়া হবে এবং অভিযুক্ত আসামী বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।