চিকিত্সা সেবা এখন প্যাকেজে, ডিজিটাল হবার স্বপ্ন কোনদিন সার্থক হবে

কালের সংবাদ ডেক্সঃ প্যাকেজে চিকিত্সা হবার ব্যাপারটা আসলে একধরনের প্রতারণা, যে কোন নির্দিষ্ট রোগের চিকিত্সা নিশ্চয়ই এক ধরনের, সেক্ষেত্রে টাকা পয়সার ওঠা-নামাটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তাছাড়া একই অসুখে একেক রোগীর ক্ষেত্রে একেক ধরনের ফিস চার্জ করা অনৈতিক, তারপরও কলকাতার ডাক্তার নার্স ও হাসপাতাল মিলে চলছে রমরমা প্যাকেজ বাণিজ্য, কি অদ্ভূত আচরণ।

প্যাকেজ মানে এখন আর ছুটি বা উত্সবে বেড়ানোতে সীমাবদ্ধ নেই।

প্যাকেজ ট্রেন, বিমান, হোটেল এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানের মত চিকিত্সার বেলায়ও তার আপন ঠাঁই করে নিয়েছে।

আমাদের দেশের অসুস্থ মানুষের বিশ্বাস কলকাতার ডাক্তার ও চিকিত্সা স্বর্গতুল্য।

সে কারণে ভগবান ডাক্তার বাবুরাও বসে নেই, সে দেশে এখন চিকিত্সা হয় প্যাকেজে।

কে কত দিতে পারেন তার ওপর নির্ভর করে চিকিত্সা ও সেবা, সেটা যে কত বাস্তব তা তাদের নাটক সিরিয়ালেও প্রকাশ্য।

প্যাকেজে চিকিত্সা হবার ব্যাপারটা আসলে একধরনের প্রতারণা নয় কি ?

একই দেশের ডাক্তার বা নার্স উন্নত দেশে এলে বদলে যায়, বদলে যায় তাঁদের সেবা পরামর্শ তেমনি ব্যবহারও।

এই পরিবর্তনের সূত্র বা উত্স বোঝা জরুরী।

তবে ঢাকা এখন সবাইকে ছাড়িয়ে এক নাম্বারে। প্যাকেজ তো বটেই রোগীর বাঁচা মরাও এখন আর ব্যাপার না। আগে টাকা তারপর অন্য কথা। মানুষ জীবনের প্রয়োজনে সরকারি খাতে আস্থা হারিয়ে বেসরকারি খাতকে স্বাগত জানিয়েছিল। ভেবেছিল প্রাইভেট হাসপাতাল নামে পরিচিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো হয়ে উঠবে উন্নত আধুনিক ও সেবাপরায়ণ। বিশেষত যখন অর্থের বিনিময়ে সেবা নিতে হবে তখন তা আর যাই হোক হেলাফেলায় হতে পারে না।

এমন অবস্থা হয়েছে এখন চিকিত্সক নার্স স্টাফ বা কর্মচারী সবাই আছেন যার যার ধান্ধায়। ভালো মানুষ বা কর্তব্যে নিষ্ঠাবান নাই বলা যাবে না। আছেন, তবে তাঁরা সংখ্যালঘু। সংখ্যাধিক্যরা এখন রোগীদের সাথে বাণিজ্যে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে বেপরোয়া বা বেসামাল কিছু ঘটে গেলে মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তখন সবাই নড়ে চড়ে ওঠেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া অবধি টি টি পড়ে যায়। রাজনীতিও সরব হয়ে ওঠে। ব্যস ঐ পর্যন্তই, তারপর টাকার জোরে, ক্ষমতার জোরে, অস্ত্রের জোরে কিংবা যে কোন বলে সব কিছু ঠাণ্ডা করে দেয়া হয়।

চিকিত্সা শাস্ত্র শিখে আসা মানুষরা দেশ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করছেন। আচরণে ভিন্নতা আছে সেবিকাদেরও। এরা এক দেশ এক জাতির হবার পরও রাষ্ট্রভেদে ভিন্ন। যার মূল কারণ সামাজিক অসঙ্গতি আর দুর্বৃত্তায়ন। যে দেশে মানুষ মরে পচে ফুলে দৈবাত্ ভেসে ওঠার খবর হয়, যে সমাজে একজন দর্জি রাজপথে দৌড়ে রক্তাক্ত হতে হতে প্রাণ হারায়, রাজনীতি কর্মী বাহিনীকে বাসে ট্রেনে আগুন লাগাতে উদ্বুদ্ধ করে, সে দেশে কিছু মানুষ হঠাত্ কর্তব্যপরায়ণ বা সত্ হতে পারে না। আমাদের চিকিত্সা শাস্ত্র কোন কালেও আধুনিকতা শেখায়নি। শেখায়নি সমাজ দর্শন বা মানবিকতা। সত্যি বলতে কি মানবিক শিক্ষাহীন কোন শাস্ত্রই তার ভূমিকা পালন করতে পারে না। পৃথিবীর বহুদেশে যে কোন শাস্ত্র বা বিষয়ে পড়াশুনা করতে গেলে প্রথমে দর্শন, ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান জানতে হয়। আমাদের বস্তাপচা রাজনীতি তা জানে বলে মনে হয় না। চিকিত্সার মত জীবন বাঁচানোর জায়গাটাও এখন দুর্বিপাকে। জ্যান্ত-মৃত কাউকেও ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এই যদি হাল, তবে ডিজিটাল হবার স্বপ্ন কোনদিনও সার্থকতার মুখ দেখবে না।

দেশের কোটি কোটি মানুষের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়েও এত উদাসীনতা আর নিয়মহীনতা আর যাই হোক সুস্থতার পরিচয় বহন করবে কি ?

বাংলাদেশি মানুষের কর্মক্ষমতা আর সৌভাগ্য কত তীব্র। বিদেশে নিজ নিজ পেশায় তাঁদের এই আন্তরিকতা বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.