কালের সংবাদ ডেস্কঃ তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠদিন ২৩শে ফেব্রুয়ারি।
২১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর মামলা প্রত্যাহার হলো, ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে শিক্ষাভবন হয়ে ৩২ এর বাসভবনে পৌঁছে দেওয়া হলো। বেগম মতিয়া চৌধুরী, মনি সিংহ, বঙ্গবন্ধু একই দিনে মুক্তি লাভ করেছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পল্টনে না, আগামীকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুকে গণসংবর্ধনা দেবো।
২২ ফেব্রুয়ারি রাতে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিলাম কারা বক্তব্য দেবেন। এখানে অনেকের নাম এলো কিন্তু আমি বললাম চার পার্টির চার নেতারা বক্তব্য দেবেন।
১০ লক্ষাধিক লোকের ২০ লক্ষাধিক হাত। আমি বঙ্গবন্ধুর সামনে। এত জনসমাগমের মধ্যে আমি বঙ্গবন্ধুকে তুমি বলে বক্তব্য শুরু করলাম।
তোমার কাছে বাঙালি জাতি ঋণী। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞ চিত্তে তোমাকে একটি উপাধি দিয়ে সেদিনের বোঝা হালকা করতে চায়।
তখনই বলা হয়েছিল যে নেতা তার জীবন-যৌবন কাঁটিয়েছেন পাকিস্তানের কারাগারে। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। সেই মহান নেতাকে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞ চিত্তে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করা হলো।
তারপরেই প্রথম আমি মঞ্চে ঘোষণা করলাম, এবার জাতির সামনে বক্তব্য দেবেন আমাদের প্রিয় নেতা “বঙ্গবন্ধু” শেখ মুজিবুর রহমান।
২১ ফেব্র“য়ারি শহিদ দিবসে পল্টনের জনসমুদ্রে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক সবার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম প্রদান করি। সমগ্র দেশ গণবিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়। জনরোষের ভয়ে ২২ ফেব্র“য়ারি আইয়ুব খান সব রাজবন্দিকে বিনা শর্তে মুক্তি দিলে দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ২২শে ফেব্র“য়ারি আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই যে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানাব। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারেই রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ২৩ ফেব্র“য়ারি বিকাল ৩টায় সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। জনসমুদ্রে লাখ লাখ লোক এসেছে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে একনজর দেখতে।
১৯৬৯-এর এই দিনে বাংলার দুঃখী মানুষের বন্ধু, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতাকে জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ’ ২৩শে ফেব্রুয়ারী ৬৯-এর গণআন্দোলন এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।