সায়লা খাতুন প্রতিবেদকঃ বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আজ সাতক্ষীরাজেলার মুন্সিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায়বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স–এর আয়োজনে“টেকসই বেড়িবাঁধ ও সুপেয় পানির দাবিতে” একমানববন্ধন ও পরিবেশ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় সরকারপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, লিডার্সেরসুবিধাভোগী নারী–পুরুষ (মনের মানুষ), স্থানীয়গণ্যমান্য ব্যক্তি ও লিডার্স কর্মকর্তাবৃন্দ।
উক্ত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন প্রেসক্লাবের সম্মানীত সভাপতি জনাব মোঃ বেলাল হোসেন।
“ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই”
লিডার্সের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোসাঃ লায়লা খাতুনউপস্থিত সবাইকে লিডার্সের পক্ষ হতে শুভেচ্ছা জানিয়েআলোচনা শুরু করেন। তিনি বলেন, “উপকূলবাসীরচাহিদা ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ।” বর্তমান বাঁধ গুলোঅনেক ক্ষেত্রেই কাঁচা ও অস্থায়ী, যা এক মৌসুমেই ধসেপড়ে। ফলে উপকূলবাসী বারবার বিপন্ন হয়ে পড়ে।সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, যেন দ্রুত এইএলাকায় পরিবেশবান্ধব, দীর্ঘস্থায়ী ও জলবায়ু–সহিষ্ণুবাঁধ নির্মাণের যেন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
উক্ত মানববন্ধনে লিডার্সের সুষমা জলবায়ু সহসশীলদলের সদস্য মিনতি সরকার বলেন, উপকূলীয়অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল সমস্যা। টেকসইবেড়িবাঁধের অভাব ও সুপেয় পানির সংকট সমাধানেসরকারের জরুরি হক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
উপস্থিত বক্তারা বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরপ্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই প্রায় চিরস্থায়ী হয়েদাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নিয়মিত বন্যায় প্রতিবছর ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, পশুসম্পদ ও জীবিকারউপকরণ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ বছর পেরিয়ে গেলেওএখানকার বাঁধগুলো টেকসইভাবে নির্মিত হচ্ছে না।
“সুপেয় পানির জন্য নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ”
সম্মেলনে অংশ নেওয়া উপকূলীয় নারী প্রিয়া কাহারজানান, সুপেয় পানির অভাবে তারা নিত্যদিনঅসহনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। দূরবর্তী এলাকাথেকে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের সময়, শ্রম ওস্বাস্থ্য সবই ব্যয় হচ্ছে। অনেক নারী স্ত্রী রোগসহ নানাধরনের পানিবাহিত রোগে ভুগছেন।
স্থানীয় সাংবাদিক ওসমান গনি সোহাগ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল দিনদিন হুঁমকির দিকে যাচ্ছে। স্থানীয় মানুষ কর্মের জন্যবাইরে চলে যাচ্ছে। নারীরা বহু কষ্টে পরিবারের দায়িত্বনিচ্ছে। এখানে লবনাক্ততা ও প্লাস্টিক নামক দানবআমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। তিনি আরো বলেন এভাবেচলতে থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য আরো ঝুঁকির মুখেপড়বে। তিনি স্থানীয় মানুষকে অনুরোধ করেন অল্পলাভের আশায় যেন সুন্দরবনকে যেন ধ্বংস না করা হয়।
“পরিবেশ রক্ষা এখন সময়ের দাবি”
সবশেষে সুন্দরবন প্রেস ক্লাবের সম্মানীত সভাপতিজনাব মোঃ বেলাল হোসেন বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, বন উজাড়, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে জীববৈচিত্র আজ হুমকির মুখে। তিনিআরো বলেন আমাদের উপকূলের মানুষের জীবনেটেকসই বেড়িবাঁধ ও সুপেয় পানি দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।তিনি বলেন আমাদের প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন হতেহবে। পরিবেশ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি নাগরিকসমাজেরও সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা থাকা প্রয়োজন।তিনি উপস্থিত সবাইকে আহ্বান করেন দিনে দিনেপ্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে।
সম্মেলন শেষে আয়োজক সংস্থা লিডার্স–এর পক্ষ থেকেএকটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করা হয়, যেখানে উপকূলীয়অঞ্চলের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সুপেয় পানিরনিশ্চিতকরণ এবং জলবায়ু সহিষ্ণু উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণেরদাবি জানানো হয়।
এই আয়োজনের মাধ্যমে উপকূলীয় মানুষের দীর্ঘদিনেরবঞ্চনা, কষ্ট এবং সংগ্রামের চিত্র আরও একবার তুলেধরা হয়। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, এই ধরনেরকর্মসূচি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে সহায়ক হবে এবংবাস্তবিক সমাধানে পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে।