আধুনিকতার ছোঁয়া হারিয়ে ফেলেছি আমাদের শৈশবকাল

মো:মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি: শৈশবকাল সাধারণত জন্মের পর থেকে শৈশবকাল  শুরু হয় এবং বয়সন্ধিকাল  শেষ হয়। বিশ্বের  অনেক দেশে শৈশবকালের একটি বয়স সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে যা অতিক্রম করার পর তারা পূর্নবয়স্ক হিসাবে বিবেচিত হয়।এই বয়স সীমা বিভিন্ন দেশভেদে ১৫-২১ বছরের মধ্য কিন্তু অধিকাংশ দেশে তা ১৮ বছর।
শৈশবের কালের  প্রতিটি মুহূর্ত সুন্দর লাস্যময়ী নারীর ভুবন জয় করা হাসির মত,ফুরিয়ে গেলেও হৃদয়ে থেকে যায়।রমণী হারিয়ে গেলেও যেমন হাসির রেশটা থেকে যায় মনের গভীরে ঠিক তেমনি ছোট বেলার দিন গুলি ফেলে এলেও দখল করে নেয় হৃদয়ের সমস্ত জমিনটা।
শৈশবের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকে প্রতিটি মানুষের আত্মা। পরিপূর্ণ জীবন হোক না সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,সাংবাদিক, ব্যারিস্টার কিংবা রাষ্ট্রপতি। সব কিছুর মুলে শৈশবের স্মৃতির কাছে সে একজন খোকা।
শৈশবের স্মৃতিহীন কোনো আত্মা বেঁচে থাকতে পারে না কখনো। শৈশবের স্মৃতির কথা মনে করতেই চোখের সামনে ভেসে আসে কতনা মধুর স্মৃতি। লুকোচুরি খেলা থেকে শুরু করে, গোল্লাছুট, কুতকুত, সাতধাপ্পা, কানামাছি,  চোর-পুলিশ খেলা,ফুটবল, হাডুডু খেলা,  ক্রিকেট খেলার মতো মজার সব খেলার স্মৃতি।
গ্রামের শৈশব পুকুর নদীতে বন্ধুদের নিয়ে গোসল করা।মা বাবার কাজে সাহায্য করা, বন্ধুদের নিয়ে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা।
যুগের পরিক্রমায় কিংবা সময়ের আবর্তনে নয়তো মানুষের চিন্তা-চেতনার উন্নতি যে কারণরেই হোক না কেন নিজেদের অজান্তে আমরা হারিয়ে ফেলেছি অনেক মূল্যবান কিছু। আধুনিকতা আমাদের স্মৃতির পাতাকে অন্তসারশূন্য অবস্থায় নিয়ে ঠেকাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিরলসভাবে।
নব্বই দশকের ছেলে-মেয়েদের শৈশব ছিল সোনালী শৈশব। হাজারও প্রাকৃতিক সমারোহে আবৃত ছিল সে শৈশব। তখনকার সময়ে জন্ম নেওয়া প্রতিটি মানুষের কাছে শৈশবের গল্প মানেই সকাল সন্ধ্যায় দাদা-দাদির কোলে বসে নানা রকম মজার গল্প শোনা। বিকালে বাড়ির সামনে পড়ে থাকা জমিতে পাড়ার সব ছেলেমেয়েরা জড়ো হয়ে লুকোচুরি, গোল্লাছুট, চি-বুড়ি, কুতকুত, দাঁইড়ে বান্দা খেলা, সাতধাপ্পা, চোর-পুলিশ খেলা,ফুটবল, ক্রিকেট খেলা।
আধুকিতার এই যুগে আমাদের শিশুদের শৈশব বলে কিছু থাকছে না। ভালো রেজাল্ট আর শিক্ষিত এই দুই তকমা লাগানোর জন্য প্রতিটি অভিভাবকই এখন হন্যে প্রায়। আগে শিশুর বয়স ছয় হলে,বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হতো। আর এখন সেটা অনেকটা এমন যে ‘বাচ্চা যখন জন্ম নেয়, প্রাইভেট তার চালু হয়’।চার বছরের শিশুর জন্যও সকাল-বিকাল দুই বেলা টিউটর রেখে দেওয়ার ঘটনা দেখা যায়। এরপর সকালে প্রাইভেট। স্কুল শেষে বিকালে প্রাইভেট। স্কুলের কাজ, প্রাইভেটের কাজ এগুলো করতে করতে দিন শেষ। ছেলেমেয়েদের বিনোদন বলে কিছু নেই। নানা রকম সিলেবাস আর কারিকুলামের বেড়াজালে বিলীন হয়ে গেল রঙিন সেই শৈশব।
এরপর আধুনিকতার ছোঁয়া যখন আরও পেয়ে বসল তখন শিশুর শৈশব খেয়ে দিল মোবাইল ফোন। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে গিয়ে আব্বু কিংবা আম্মুর ফোন ধরে। এরপর শুরু হয় গেম খেলা, নয়তো কার্টুন দেখা। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বই রেখে ড্রেস না খুলেই বসে পড়ে ফোন নিয়ে।
শৈশবকাল খুব সংক্ষিপ্ত হলেও এর স্মৃতিজড়িত আবেগময় সময় গুলো বর্ণনা করে শেষ করা যায় না।
আসুন আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের শৈশবকে প্রাকৃতিক ছোঁয়ায় ভরে তুলি। সুস্থ্য ও সুন্দর বিনোদনের আবহাওয়া বেড়ে ওঠার সুযোগ দিন। শৈশবের স্মৃতিতে আলোকিত হোক প্রতিটি সম্ভাবনাময় জীবন

Leave a Reply

Your email address will not be published.