এখনো উদ্ধার হয় নাই অপহৃত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন

রুমা প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন এখনো উদ্ধার হয় নাই। এই মুহূর্তে তার ভাগ্যে কি হচ্ছে তা জানা যায়নি।

পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানায়, মঙ্গলবার (এপ্রিল ২০২৪) রাত সোয়া আটটার দিকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রুমা সোনালী ব্যাংকে থানা দে য়। এই সময় গ্রিল ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ব্যাংক ব্যবস্থাপক কে খুঁজতে থাকে। তাকে না পেয়ে ব্যাংকে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র গুলি গুলি লুট করে মারধর করতে থাকেন। ব্যাংক ম্যানেজার ওই সময় ব্যাংক সংলগ্নে উপজেলা পরিষদ মসজিদে তারাবি নামাজ আদায় করছিলেন। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে খুঁজে না পেয়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মসজিদে হানা দেয়।

মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম বলেন মুরসালীগন তারাবি নামাজ আদায় করার অবস্থায় আট জনের একটি সশস্ত্র সদস্য দল মসজিদের প্রবেশ করে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে খুঁজতে থাকে। প্রথমে তাকে সনাক্ত করতে পারিনি। একটু পরে ব্যাংক থেকে একজন পুলিশকে পিটিয়ে আহত করে ধরিয়ে আনে মসজিদে। তখন ওই পুলিশ ব্যাংক ম্যানেজারকে দেখাতে বাধ্য দেয়া হয়।শনাক্তের পর তাকে ব্যাংকে নিয়ে যায়। ব্যাংকের ভল্ট খুলতে চাবি না বেয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে যায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।

উপজেলা ভারনির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় কত টাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নিয়ে গেছে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

ওই সময় ব্যাংকের ভল্টে সম্ভবত এক কোটি ২৪ লক্ষ টাকা ছিল। ব্যাংক ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন মুক্তি পেলে সঠিক তথ্য জানা যাবে বলেন ব্যাংকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন সরকারের দপ্তরের কর্মচারী কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা ও বোনাসের জন্য ২ এপ্রিল বান্দরবান থেকে এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা আনা হয়েছিল রুমা সোনালী ব্যাংকে।

এদিকে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় পরিদর্শনে এসেছিলেন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল মামুন। ব্যাংক পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার পর মসজিদ পরিদর্শন করেন এবং ডাকাতির ঘটনায় আহত পুলিশকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
পরে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন ব্যাংক ডাকাতি ও পুলিশের অস্ত্র লুটকারী সন্ত্রাসীদের কোন প্রকার সার দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ সময় বান্দরবান রিজিওনের রিজিয়ন কমান্ডার জেনারেল মেহেদী হাসান, জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন উপস্থিত ছিলেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকালে উপজেলা সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্যোগে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন এর নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে উপজেলা পরিষদ এলাকায় মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন এর নিঃশর্ত মুক্তি, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিধান ও ব্যাংক ডাকাতি সহ পুলিশের অস্ত্র লুট কারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য যে মঙ্গলবার রাতে ব্যাংক ডাকাতের ঘটনাটি সশস্ত্র সংগঠন ও কিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এ ব্যাপারে কেএফএফ’র পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত থেকে তাদের ফেসবুক পেইজে বা লিখিত কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি।

তবে ডাকাতির সময় কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সাথে মিয়ানমারের চীন স্টেট এর বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি গোষ্ঠীর কিছু সদস্য ও থাকতে পারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এদিকে রুমার সোনালী ব্যাংক ডাকাতির পর বান্দরবান- রুমা সড়কে যানবাহন চলো বন্ধ রয়েছে এবং ব্যাংকের যাবতীয় লেনদেন বন্ধ থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে বুধবার দুপুরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত সংগঠন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা থানচি উপজেলায় কৃষি ও সোনালী দুঈটিতে হামলা চালায়। ওই সময় দুটি ব্যাংক থেকে ১৭ লাখ পাঁচচল্লিশ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন নিশ্চিত করেন।

 

রুমা সোনালী ব্যাংক ও আইজিপি পরিদর্শন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.