মোঃ মোকাররম হোসাইন, কালাই জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাটে কালাইয়ে অত্যাধিক তাপমাত্রার কারণে গাছে আম ও লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ দিকে এপ্রিলের শুরু থেকে প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। একদিকে অনাবৃষ্টি, অন্যদিকে খরায় গাছ থেকে আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন চাষী ও বাগানের মালিকরা।চলতি মৌসুমে এরপরও যে আম,লিচু আছে,তা বিক্রি করে লাভের আশা করছিলেন চাষীরা।
কালাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে,চলতি বছর এ উপজেলায় ৬০হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। আম উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১হাজার ১৩ মেট্রিক টন।
এদিকে চলতি বছর ১৩ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। লিচু উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ মেট্টিক টন।
অর্থকরী এই মৌসুমী ফল থেকে প্রতি বছর লক্ষ টাকা আয় করেন স্থানীয় আম ও লিচু ব্যবসায়ীরা। ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় চাষীদের মতে,মৌসুমের শুরু থেকে দিনে প্রচণ্ড দাবদাহ ও রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল। এতে করে আমও লিচুর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় ফুল থেকে গুটি বের হওয়ার সময় কিছু ঝরে গেছে। এর পর থেকে চলছে টানা তাপপ্রবাহ। ফলে পাকার আগেই গাছে আমও লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কালাইয়ে আম ও লিচু চাষীরা জানান, কালাইয়ে মোজাফফর, বোম্বাই, চায়না-৩ ও দেশি জাতের লিচুর চাষ হয়। এখানকার লিচুর কদর সারা দেশেই রয়েছে। লিচুর মৌসুম শুরুর আগেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগানের লিচু কিনে নেন। এরপর থেকে লিচু তোলা ও বাজারজাত করার দায়িত্ব তারাই পালন করেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে গত বছরের তুলনায় অর্ধেক মুকুল এসেছে। এ কারণে পাইকারী ব্যবসায়ীদের আনাগোনা এবার কম।
কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন হাতিয়র গ্রামের আমচাষী কাজী মোঃ আনোয়ারুল হক মামুন বলেন, গ্রামে অনেক বাগান আছে। খরার কারণে আমের গুটি ঝরে পড়ছে।
শাহীন হোসেন নামে বাগান মালিক বলেন, দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে। বাগানের তিন ভাগের এক ভাগ আম ঝরে পড়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় আম নিয়ে বেকায়দায় আছি। পানি দিয়েও কাজ হচ্ছে না।
এ উপজেলার রানা সরদার নামে আমচাষী বলেন, তীব্র খরার কারণে আমের গুটির ক্ষতি হচ্ছে।গাছে সেচ ও কীটনাশকের মিশ্রণ স্প্রে করেও গুটি ঠেকানো যাচ্ছে না। এবার মুকুলও কম ছিল। তাই ফলন ভালো হবে না।
এ উপজেলার ঝামুটপুর গ্রামের লিচুচাষী এরশাদুল রহমান বলেন‘ আমার বাগানে ৩৭টি লিচু গাছ আছে।গাছের গোড়ায় সকাল-বিকেল পানি ঢালছি। তাও লিচুর গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না।গাছের চেয়ে মনে হচ্ছে মাটিতেই বেশি লিচু পড়ে আছে। এখন লিচুর জন্য বৃষ্টির খুব দরকার।
কালাই উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে , গত কিছুদিন ধরে প্রচন্ড রোদ ও খরার কারণে গাছের আম ও লিচু ঝরে পড়া থেকে রক্ষার জন্য বাগানীদের গাছের গোড়ায় পানি গাছের পাতায় পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।তবে বিভিন্ন জায়গায় পানির সুব্যবস্থা না থাকায় আম ও লিচু ফলনের লক্ষমাত্রা পুরণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বৃষ্টি হলে অনেকাংশে ক্ষতি কম হবে।