কেএনএফ তান্ডবে পালিয়ে রুমা সদরে আশ্রয় নিয়েছে শিশু নারী পুরুষ-২৩৬ জন

রুমা প্রতিনিধিঃ বাড়িতে গোলা ভরা ধানও আছে। বাড়িতে মুরগি, শুকর ও ছাগল রয়ে গেছে। জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সবার সাথে রুমা সদরে চলে এসেছেন। শরীর এখানে হলেও মন থাকে বাড়িতে। এসব কথা বলেছেন ৬৪ বছর বয়স্ক নারী নাংসাপ্রু মারমা। তিনি বলেন, মনের মধ্যে কী যে চিন্তা জন্মে তাও বুঝিয়ে বলতে পারছি না।

কখন বাড়িতে ফিরতে পারবো এচিন্তায় ঘুমও হবেনা। ঘরে গেলে বোম পার্টিরা আবার কি কি করবে, তাও বলতে পারছিনা। ভয় লাগে। বাড়ি ও গ্রাম ছেড়ে কোথাও থাকতে চান না।
এমন কথা বলেন মুচিংপ্রু মারমা(৬০), হ্লা মে চিং(৩২), আবুমা(৩৮) সহ আরো অনেকে। বান্দরবানের রুমায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মুলপি পাড়া বাসিন্দা এরা।

বিচ্ছিন্ন তাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট( কেএনএফ)) সন্ত্রাসীর কর্মকান্ড ও প্রাণ নাশের হুমকিতে ভয়ে পালিয়ে এসে রুমা সদরে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের সঙ্গে কথা হয়- এ প্রতিবেদকের। তখন মারমা ওয়েলফেয়ার ভবনে নীচ তলার ছাউনী বাউন্ডারী ওয়ালে বসেছিলেন এসব নারীরা।

স্থানীয়রা বলেছেন গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা মুলপি পাড়া বাসিন্দা মংনাক মারমা (৩৪) ও মংবাসিং মারমা (৩৬) নিরীহ ঝুমচাষি এই দুইজনকে পাড়ার বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গন থেকে বিনা উস্কানিতে অস্ত্রমুখে ধরে নিয়ে যায়। জেএসএস ও সংস্কার সোর্স সন্দেহে পাড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পিটায়। এতে দুই নিরীহ ব্যক্তি মারাত্মক আহত হয়। এর আগে কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা মুলপি পাড়া বৌদ্ধ বিহারে প্রবেশ করে বন্দুকের নল তাক লাগিয়ে বলেন, সংস্কার পার্টি ও জেএসএসরা কোথায়? একথা বলে- ধর্মীয় প্রাণ নর- নারীদের হুশিয়ারি করে শাসিয়ে বলেন জেএসএস – সংস্কার তথা সেনাবাহিনীকে কেএমএফ সম্পর্কে কোনো তথ্য দিলে সে যেখানে থাকুক, মেরে ফেলা হবে।

ওইসময় ধর্মীয় প্রাণ বয়োজ্যেষ্ঠ নর-নারীরা বাংলা নববর্ষ বা মাহা সাংগ্রাইং পোয়ে উপলক্ষে পবিত্র স্থান হিসেবে বৌদ্ধ বিহারে অষ্টশীল পালনে ব্যস্থ ছিলেন।

মুলপি পাড়াবাসিন্দা মংনাক মার্মা ও মংবাসিং মারমাকে নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয় – রুমা সকল সচেতন নাগরিক সমাজ ব্যানারে। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় (১৯এপ্রিল) রুমা সদরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এর মধ্যে আহত দুই ব্যক্তি মুলপি পাড়া থেকে পালিয়ে এসে রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। এতে মুলপি পাড়ায় অবস্থান করা কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা মুলপি পাড়া মারমাদের উপর ক্ষেপে ওঠে এবং তাদের ভয়ে মুলপি পাড়ার নিরীহ লোকজন প্রাণের নিরাপত্তার জন্য যে ভাবে পালিয়ে আসেন। তারা এখন সবাই মারমা সম্প্রদায়ের লোক এবং রুমা সদরে মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। পাইন্দু ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার অংসাপ্রু মারমা বলেন তাঁর পাইন্দু ইউনিয়নের মুলপি পাড়া থেকে মোট ৪৯ পরিবারে শিশুসহ নারী-পুরুস মোট ২৩৬জন চলে আসছে। তারমধ্যে পুরুষ- ১১৫ জন, পুরুষ ১২১ জন ও শিশু ২৯জন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহরিয়ার মাহমুদ রন্জু বলেন মারমা ওয়েলফেয়ার ভবনে আশ্রয় নেয়া নিরীহ লোকজনের বিশ পেকেটর্ খাবার ও পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দুইশত কেজি চাল দেয়া হয়েছে।
চাহিদা মোতাবেক এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রুমা থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) ওসি মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া লোকজন সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ।

এদিকে রুমা জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল শাহরিয়ার ইকবাল কেএনএফ তান্ডবে পালিয়ে এসে মারমা ওয়েলফেয়ার ভবনে আশ্রয় নেয়া লোকজনদের পরিদর্শন করে খোঁজ নিয়েছেন এবং বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থাসহ চাহিদা ভিত্তিক সহায়তা প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

পরে কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত হয়ে রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া দুইজনকে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.