জয়পুরহাটে  ২৫ ছাত্রের জীবিত অভিভাবককে মৃত দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের রহমতপুর(রামভদ্রপুর) দারুস সুন্নাহ এবতেদায়ী কওমী হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ২৫জন ছাত্রের জীবিত অভিভাবককে মৃত দেখিয়ে ভূয়া মৃত্যু সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে দাখিল করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার মুহাতিম ও পরিচালক মওলানা আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে।

তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাপ্ত নথিতে দেখা যায়, তিনি ঐ মাদ্রাসার ২৫জন ছাত্রের জীবিত পিতাকে মৃত দেখিয়ে কম্পিউটারে স্ক্যানের মাধ্যমে তাদের নামে ভূয়া মৃত্য সনদ তৈরী করেন।

উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে ঐ ২৫জন ছাত্রসহ মোট ৪৫জন এতিম ছাত্রের তালিকাটি ভাতা প্রাপ্তির জন্য মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউনুছ আলী মন্ডল এবং মুহাতিম আব্দুল খালেক যৌথ স্বাক্ষর করে জমা দিলে সরকারী ভাতা প্রাপ্ত হয়। যেখানে প্রতিজন এতিম ছাত্র মাসে ২ হাজার টাকা করে পেয়ে থাকেন।

রামভদ্রপুর গ্রামের দুলাল হোসেনের স্ত্রী বিলকিছ বেগম বলেন, আমার ছেলে কোরাইশিন অত্র মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। সে প্রায় বাড়িতে এসে বলে, মাদ্রাসার হুজুরেরা আমাকে এতিম বলে থাকে। আমার কি বাবা নেই? তোমার বাবা হাকিমপুর ডিগ্রী কলেজের কর্মচারী।

একই শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহমিদ সোয়াইব সিয়ামের বাবা ভূইডোবা গ্রামের সোহেল রানা বলেন ২০১৮ সালে মাদ্রাসার মুহতামিম তাকে মৃত দেখিয়ে তার ছেলেকে এতিম বানিয়ে সরকারি টাকা উত্তোলন করে থাকে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

রামভদ্রপুর গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল রাফি। সে ৩য় শ্রেণির শিক্ষাথী। তার বাবা বলেন আমরা দ্বীনি শিক্ষার জন্য অত্র মাদ্রাসায় দিয়েছি। প্রতি মাসের ছেলের পড়াশুনা বাবদে ৩’শ টাকা করে মুহতামিমকে দিয়ে থাকি। যখন জানতে পারলাম ২০১৪ আমি মারা গেছি, তখন এই হুজুরের প্রতি আমার ঘৃণা জন্মেছে।

বাগজানা ইউনিয়নের সভাপতি ও এতিমখানার সভাপতি ইউনুছ আলী জানান উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে জমাদান কৃত তালিকায় দেখানো স্বাক্ষরটি আমার না। ছাত্রদের অভিভাবকের মৃত্যু সনদ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

মুহাতিম আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের জানান, এসব ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে তিনি সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে গোপনে আপোষরফার প্রস্তাবে তিনি অকোপটে জাল সনদ তৈরী করার কথা স্বীকার করেন এবং এতিম বাচ্ছাদের মুখের দিকে তাকিয়ে এ কাজটি করেছেন। এ বিষয়ে সংবাদ না করার জন্য অনুরোধ জানান।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোছাঃ শাহিনুর আফরোজ জানান, এ ঘটনা জানার পর মাদ্রাসার দুইজন ছাত্রের শিকারোক্তিতে সত্যতা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। আরো তদন্ত করার জন্য স্থানীয় বাগজানা ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাগজানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সীল ও স্বাক্ষর জাতিয়াতি করেছেন মুহতামিম। তিনি জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে মৃত্যু সনদে একই নম্বর ব্যবহার করে সমাজ সেবা থেকে অর্থ গ্রহণ করছেন। আমি এলাকার ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশকে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন পেলে সমাজসেবা অফিসে পাঠিয়ে দিব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরমান হোসেন বলেন, বিষয়টি অবগত হয়ে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.