নওগাঁয় গৃহবধূ’র পর এবার তার শ্বশুড় ও শ্বাশুড়ি কে একঘরে করলো ইউপি মেম্বার সহ সমাজপতিরা

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টারঃ নওগাঁর মহাদেবপুরে মিথ্যা অভিযোগে সংখ্যালঘু পরিবারের এক গৃহবধূকে এক ঘরে করায় ঐ গৃহবধূ স্বামীর বাড়ী থেকে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ঐ গৃহবধূ  পালিয়েছে এমন অভিযোগে গৃহবধূর বয়োবৃদ্ধ শ্বশুড় ও শ্বাশুড়ী কেও একঘরে করলো এক ইউপি মেম্বর। দীর্ঘ ৩ সপ্তাহ ধরে এক ঘরে করে রাখায় পরিবারটি এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। অমানবিক এক ঘরে করে রাখার ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হাতুড় ইউনিয়ন এর গাহলি গ্রামে। ঐ গ্রামের মৃত শ্রী চরণ ডাক্তার এর ছেলে শ্রী ভূগোল চন্দ্র বর্ম্মণ অভিযোগ করে বলেন যে, গত ১২ মার্চ দিবাগত রাত ১০টারদিকে হাতুড় ইউপি মেম্বার শ্রী পরিমল চন্দ্র, কথিত মাতব্বর খোরশেদ আলম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল হোসেন সহ আরো কয়েক জন তার বাড়ির সামনের পাকা রাস্তা থেকে পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের নুর ইসলাম ওরফে সুধীর পাগলার ছেলে রুবেল হোসেন ওরফে আব্দুল কুদ্দুস কে আটক করে নিয়ে আসে। তারা দাবি করে যে আব্দুল কুদ্দুসের সাথে ভূগোল চন্দ্রের পুত্রবধূর অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এই অপবাদ দিয়ে তাদের দু’জনকেই মারধর করেন। এরপর আব্দুল কুদ্দুসের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয় এবং তাদের ছেলের বউ (গৃহবধূ) কে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া সহ গ্রামের সব লোককে এক সন্ধা খাওয়ানোর আদেশ দেন। যতদিন গ্রামে খাওয়া না দিবে ততদিন তাকে এক ঘরে করে রাখারও নির্দেশ দেয়। এসময় তার ছেলে সঞ্জিত কুমার বর্ম্মণ ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে তার ছেলে বাড়ি আসলে তাকেও হুমকি দেয়া হয়। ভয়ে তারা তার ছেলের শশুড় বাড়ি নওগাঁর পোরশা উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামে পালিয়ে যায়। ছেলে ও ছেলের বউ পালিয়ে যাওয়ায় পরিমল মেম্বার, মাতব্বর প্রেমলাল বর্ম্মণ ও তাদের লোকেরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ভূগোল ও তার স্ত্রী ভক্তি রাণীকে এক ঘরে করার নির্দেশ দেয়। এমনকি গত রবিবার একই গ্রামে ভূগোলের মাসি দুফরি রাণী মারা গেলে তার সৎকার কাজে অংশ নিতে গেলে মাতব্বর প্রেমলাল তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। তাদেরকে এক ঘরে করা হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় মন্দিরেও যেতে নিষেধ করা হয়।
সরেজমিনে ঐ গ্রামে গেলে ভূগোল ও তার স্ত্রী ভক্তি রাণীকে তাদের টিনের ছাওয়া মাটির ছোট্ট বাড়ির দাওয়ায় বসে থাকতে দেখা যায়। ভূগোল জানান, তিনি হোমিও ডাক্তারি করে কোন রকমে দিনাতিপাত করেন। গ্রামের লোকদের খাওয়ানোর মত সামর্থ তার নেই। তার পুত্র বধূর সাথে ঐ ছেলের কোন সম্পর্ক নেই বলেও তিনি জানান। তার মতে মিথ্যা অভিযোগে ঐ ছেলেকে আটকে রেখে বিচার করে মারপিট করে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ায় পরিমল মেম্বারকেই এক ঘরে করা উচিৎ। তার স্ত্রী ভক্তি রাণী জানান, তাদের সাথে গ্রামের লোকেরা কোন কথাবার্তা বলেন না। কেউ তাদের বাড়িতে আসেন না। তাদেরকেও কারও বাড়িতে যেতে দেন না। তাদের বাড়িতে টিউবওয়েল আছে জন্য কারো বাড়িতে না গিয়েও তারা তাদের নিজের বাড়িতে থাকতে পারছেন। তবে বিনা দোষে তাদেরকে এরকম কষ্ট দেয়া উচিৎ হয়নি।
জানতে চাইলে পরিমল মেম্বার অভিযোগ স্বীকার করে সংবাদকর্মীকে বলেন, অনৈতিক কাজের বিচার করে তাদেরকে এক ঘরে করা হয়েছে। অনৈতিক কাজের বিচার কিংবা এক ঘরে করার এখতিয়ার তার আছে কিনা এই প্রশ্নের কোন উত্তর তিনি দিতে পারেননি।
এব্যাপারে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিন জানান, এ বিষয়ে স্থানিয় অনলাইন  মহাদেবপুর দর্পণে সংবাদ প্রকাশিত হলে থানার এসআই জাহিদ কে এলাকায় পাঠানো হয়। এসআই জাহিদ জানান, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এরআগেও ঐ এলাকায় থানা পুলিশ এক শিশু ধর্ষণ মামলার আসামীকে ধরতে গেলে ঐ মেম্বার পালিয়ে দেয় অভিযুক্ত কে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.