“বঙ্গবন্ধু”র যুক্তি’ সংসদে বিরোধী দল গঠনে

কালের সংবাদ ডেক্স ঃ গণতন্ত্রের মুল মন্ত্র হলো বিরোধী দল। গেল দুটি সংসদের বিরোধী দলের আসন অলংকৃত করে ছিলো জাতীয় পার্টি। এবার জাতীয় পার্টি ১১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয়ী।

এবার বিরোধী দল কারা হচ্ছেন তা এখনো জানাজায়নি। সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। মন্ত্রিসভাও গঠন হয়েছে। মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টনও শেষ।

তবে এবার কি সংসদ নেতা এবং স্পিকার মিলে বিরোধী দলের নেতা ঠিক করবেন।

একাদ্বশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও প্রাপ্য আসন অনুযায়ী জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সে সময় ‘সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি’, আর ‘রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি’ সংবাদ মাধ্যমে এমন বাক্যের ব্যবহার সবসমই আমরা দেখি।

সংবিধান বা কোনো আইনে বিরোধী দল সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। সংবিধান প্রণেতারা তখন এ বিষয়ে কী চিন্তা করেছিলেন বলা মুশকিল। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে ‘বিরোধীদলীয় নেতা’ এমন কথা বলা আছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত দল বা গ্রুপের নেতা।’

১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরও বিরোধী দল কারা হবে সে নিয়ে সংসদে প্রশ্ন উঠেছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন জিতেছিল, অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্ররা সাতটি আসন পায়।

ওই দলগুলো এবং স্বতন্ত্ররা আতাউর রহমান খানকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান। ১৯৭৩ সালের ১৩ই এপ্রিল সংসদে এ নিয়ে বিতর্ক হয়। সংসদে সরকারের বিরোধিতাকারী দল বা গ্রুপের নেতাকে স্পিকার বিরোধী দলের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেন বলে মত দিয়েছিলেন আতাউর রহমান খান। বলেছিলেন, বিরোধী দলের নেতার স্বীকৃতির জন্য দল বা গ্রুপ ন্যূনতম কতোজন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে কার্যপ্রণালি বিধিতে তার কোনো উল্লেখ নেই।

সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আতাউর রহমান খান একা এক দলের একজন, আরেক দলের একজন, আর কয়েকজন নির্দলীয় সদস্য মোট পাঁচ-সাতজন সদস্য সংসদ ভবনে একটি কক্ষে একটি জায়গায় বসতে চেয়েছেন এবং এ ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর যুক্তি ছিল, ২৫ জনের কম সদস্য নিয়ে গঠিত কোনো দলকে বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া যায় না। তবে ২৫ জনের কম সদস্য নিয়ে কোনো দল গঠিত হলে এবং ওই দলে কমপক্ষে ১০ জন সদস্য থাকলে ওই দলকে পার্লামেন্টারি গ্রুপ বলা যেতে পারে। কিন্তু সংসদীয় দল বলা যাবে না।

১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রধান দলগুলো বর্জন করেছিল। সে নির্বাচনের আগে আ স ম রবের নেতৃত্বে কয়েকটি দল নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠিত হয়। নির্বাচনে তারা ১৯টি আসন পেয়ে বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৭ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এরইমধ্যে দলটির বিরোধী দল হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের কারও কারও মতে, স্বতন্ত্র এমপিদের বিরোধী দল হতে বাধা নেই। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.