বিএনপি নেতার নিয়ন্ত্রণে দলিল লেখক অফিস অতিরিক্ত টাকার চাপে ভ‚মি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে না ক্রেতারা

মোঃ লুৎফর রহমান লিটন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে দলিল লেখক সমিতির নামে সিন্ডিকেট করে ভ‚মি ক্রেতাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে। বিশেষ করে ভ‚মি ক্রেতাদের থেকে মাত্রা অতিরিক্ত কমিশন আদায় করা হচ্ছে এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
এদিকে অতিরিক্ত টাকা দিতে না পেরে ভ‚মি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না অনেকে। অভিযোগকারীরা জিম্মিদশা থেকে মুক্তি চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
জানা গেছে, ৫ জুলাইয়ের পর সিন্ডিকেটের হাতবদল হয়ে যায়। উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, দলিল লেখক সমিতিরি সভাপতি ও সেচ্ছাসেবক দলের আহŸায়ক, দললি লেখক সমিতির সেক্রেটারি সাহাদত হোসেন বর্তমান সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন। সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার পর দলিল লেখকদের জন্য খাসি জবাই করে নৈশ ভোজের আয়োজন করেন সিন্ডিকেটের এই দুই নেতা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, দলিল লেখকদের সিন্ডিকেট নিয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে। সাবরেজিস্টার অফিস আইন মন্ত্রণালয়ের অধিনে। আমি আইন মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি লিখব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সাবরেজিস্টার মো. মাসুদ রানা বলেন, ভুক্তভোগী ভ‚মি ক্রেতাদের আমাকে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন।
ভুক্তভোগী তালম ইউনিয়নের চক কোলামুলা গ্রামের সোলায়মান হোসেন বলেন, আমি চক কোলামুলা মৌজার ৩৩ শতাংশ জমি কিনেছি ছয় লাখ টাকায়। কিছু টাকা বায়না দিয়েছি জমির মালিক জাকারিয়া বিদ্যুতকে। পরে দলিল লেখক অফিসে জমি রেজিস্ট্রেশন করতে যাই। দলিল লেখকরা বিভিন্ন হিসেব কষে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা চান রেজিস্ট্রেশন খরচ বাবদ। আমি হতবাক হয়ে পড়ি। শেষমেষ তিন লাখ ১৫ হাজার টাকার কমে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেছে, আমি সেই জমি রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারি নাই।
তালম গ্রামের পদ্ম পাড়ার মইনুল ইসলাম বলেন, আমি তালম মৌজায় ১০ শতাংশ জমি কিনেছি তিন লাখ টাকা দিয়ে। দলিল লেখকরা প্রতি লাখে ১৭ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন খরচ চাইছেন। আমি একজন ক্ষুদ্র কৃষক। এত টাকা কোথায় পাবো।
তালম গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, মাত্র এক লাখ টাকার জমি রেজিস্ট্রেশন করবো। ১৫ হাজার টাকার কমে কেউ করে দিচ্ছেন না। দুই সপ্তাহ যাবৎ দলিল লেখকদের কাছে ঘুরছি।
দলিল লেখক সমিতির সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি সাহাদত হোসেন বলেন, আগের তুলনায় অনেক কম নেওয়া হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন খরচ। আমাদের বেতন নেই। একটু বেশি না নিলে চলবো কি করে।
ভ‚মি রেজিস্ট্রেশন আইন ২০২৪ অনুযায়ী ইউনিয়নের আওতাভুক্ত ভ‚মি রেজিস্ট্রেশন খরচ প্রতি লাখে সাত হাজার পাঁচশ টাকা। পৌরসভার নয় হাজার পাঁচশ টাকা। পৌরসভার ক্ষেত্রে ভ্যাট ট্যাক্স যুক্ত হবে।
৫ জুলাইয়ের পর দলিল লেখক সিন্ডিকেটের জিম্মিদশা থেকে মুক্তির দাবিতে তাড়াশে মানববন্ধন হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বরাবর স্বারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ইউএনও কে ব্যবস্থা নিতে বলে দিচ্ছি।
সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিস্টার অফিসের জেলা রেজিস্টার শরীফ তোরাব হোসেন ভুক্তিভোগী ভ‚মি ক্রেতাদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। তদন্তপুর্বক অভিযোগের যথাযথ সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক অভিযুক্ত দলিল লেখকদের লাইসেন্স বাতিলেরও কথা জানান।
এ প্রসঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, বিষটি নিয়ে আমাদের নিবন্ধন অধিদপ্তরের সাথে কথা বলবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *