ভাঙ্গুড়া প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় থানায় মামলা

সিরাজুল ইসলাম আপন, পাবনা প্রতিনিধি: পাবনার ভাঙ্গুড়ায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী (২৮) এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের পর মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের পুঁইবিল গ্রামে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী নিজে বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এর আগে ভুক্তভোগী নারী থানায় হাজির হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তবে পুলিশ বলছে, অচিরেই আসামীকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।

মামলা ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ভাঙ্গুড়ার পুঁইবিল গ্রামের হতদরিদ্র ব্যক্তির মেয়ে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ও দুই সন্তানের জননী কয়েক বছর ধরে স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করেন। তার পিতা মাতা বৃদ্ধ হওয়ায় তাদের কাজে সহায়তা করার জন্য মাঠে ছাগল চড়ানোসহ গরুর ঘাস কাটার কাজ করেন তিনি। এর মধ্যে একই গ্রামের মৃত তোফাজ্জল প্রামাণিকের ছেলে শামছুল হকের কুনজরে পরেন শ্রবণ প্রতিবদ্ধী। প্রতিবদ্ধী ছাগল নিয়ে মাঠে যাওয়া আসার বিভিন্ন সময়ে তাকে শামছুল উত্যক্ত করতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে ওই প্রতিবন্ধী নারী তার পরিবারের লোকজনসহ এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে জানান। প্রথম দিকে গ্রামপ্রধানরা অভিযুক্ত শামছুলকে নিষেধ করেন। কিন্তু শামছুল কারো কথায় কর্ণপাত না করে ওই নারীর ওপর ক্ষিপ্ত হন। গত সপ্তাহ খানেক আগে ওই নারী ছাগল নিয়ে মাঠে গেলে শামছুল সুযোগ বুঝে ঘাসের জমির আড়ালে তাকে ঝাপটে ধরে ধর্ষণ চেষ্টা চালায়। এ সময় ওই নারীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে শামছুল পালিয়ে যায়। পরে বাড়িতে এসে ওই প্রতিবন্ধী নারী তার মাকে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী পরিবার বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকার প্রধানদের কাছে জানালে সালিশ বৈঠকে শামছুলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। কিন্তু বিষয়টি ভুক্তভোগী পরিবার না মেনে ভাঙ্গুড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে স্থানীয় আ.লীগ নেতা জিয়া প্রভাব খাটিয়ে কৌশলে ভুক্তভোগী ও তার মাকে ভাঙ্গুড়ার শরৎনগর বাজারে নিয়ে আসে। এরপর অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও এসআই আনোয়ারের উপস্থিতিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর, গ্রামপ্রধান সাহেব আলী আ.লীগ নেতার দোকানে বসে ভুক্তভোগীকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। এ সময় ভুক্তভোগী টাকা নিতে ও স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে উপস্থিত জিয়া পুলিশের সম্মুখে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পরে স্বাক্ষর নিয়ে ভুক্তভোগীর হাতে ৬ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন জিয়া।

এ ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত শামছুল বলেন, প্রতিবেশী সম্পর্কে ওই প্রতিবন্ধী নারী তার নাতনী হয়। তাই তার সাথে একটু আধটু ইয়ারকি করা হয়েছে মর্মে স্বীকার করেছেন।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ভাঙ্গুড়া থানার এসআই আনোয়ার হোসেন সালিশের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর, আ.লীগ নেতা জিয়া ও গ্রামপ্রধান সাহেব আলীর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাশিদুল ইসলাম মামলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী নিজেই বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-৫। দ্রুত আসামীকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.