শেখ রাসেলকে হত্যার মধ্য দিয়ে ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল- আশরাফুল আলম লিটন

মোঃ আনিছুর রহমান, বেনাপোল প্রতিনিধিঃ শহীদ শেখ রাসেলের ৬০ তম জন্মবার্ষিকী সম্পুর্ণ ব্যতিক্রম ভাবে দেশে এই প্রথম পালিত হলো যশোর এর শার্শা উপজেলায়। বুধবার বিকাল সাড়ে ৪ টার সময় রাসেল নামে ৬০ জন শিশুদের দিয়ে ৬০ টি শান্তির প্রতিক  কবুতর উড়িয়ে শিশুদের মধ্যে ৬০ টি সাইকেল বিতরন কেক কাটা ও আলোচনার মধ্যে দিয়ে উদযাপন হয়েছে শেখ রাসেল এর ৬০ তম জন্মবার্ষিকী । এসময় প্রধান অতিথি হিসাবে যশোর জেলা আওয়ামলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বেনাপোল পৌর সভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেউ যেন আর প্রতিষ্ঠিত  করতে না পারে, সেজন্য শেখ রাসেলকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ রাসেলকে হত্যা করেও রাসেলের আদর্শ ও স্মৃতি মুছে ফেলতে পারেনি। শেখ রাসেল সবার স্মৃতিতে অমর হয়ে আছেন এবং সবার স্মৃতিতে থাকবেন দুর্জয় হয়ে। শেখ রাসেলের নির্মল শৈশব, নির্ভিক, দুর্জয় ব্যক্তিত্ব তুলে ধরার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের শিশু ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ করব। শেখ রাসেলকে হত্যার মধ্য দিয়ে ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল । কথা গুলো বলেন যশোর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর সভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন।

রাসেল স্মৃতি সংসদ শার্শা উপজেলা শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের শার্শা উপজেলা শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান।

এর আগে বেলা ৪ টার  সময় শেখ রাসেলের ৬০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাসেল নামে ৬০ জন শিশু কিশোরকে কে দিয়ে ৬০ টি কবুতর উড়িয়ে ও শার্শা উপজেলার ৬০ জন রাসেল নামে শিশু কিশোর এর মাঝে সাইকেল বিতরন করে অনুষ্ঠানটির শুভ উদ্বোধন করা হয়। বেনাপোল পৌর সভার সাবেক মেয়র লিটন শার্শ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রাথমিক, কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেনীর ১০/১১ বছরের রাসেল নামের ছেলেদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রেজিষ্টার খাতা দেখে ৬০ জন রাসেল নামের শিশুদের  সংগ্রহ করেন। রাসেল নামের শিশুদের ভালবাসার স্বরুপ ৬০ তম জন্মবার্ষিকীতে ৬০ টি সাইকেল  উপহার এবং শেখ রাসেলের ছবি সংবলিত ৬০ টি গেঞ্জি উপহার দেন।

প্রধান অতিথি সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র নায়ক এর পরিবার দেশের জন্য এত রক্ত দেয়নি। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পরিবার রক্ত দিয়ে প্রমান করেছেন দেশকে কত ভালবাসে। তিনি বলেন আমি শার্শা বেনাপোলের মানুষকে ভালবেসে আমার সমর্থ অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করি।  আজ আমি খুজে খুজে শার্শার শিক্ষকদের সহযোগিতায় ৬০ জন রাসেলকে খুজে পেয়েছি। আজ তাদের দিয়ে ৬০ টি কবুতর উড়িয়ে আমি আমি শার্শার মানুষের শান্তি কামনা করেছি। তিনি বলেন, রাসেল এর জন্মের পর থেকে তার পিতা জাতির জনক জেল খানায় থেকেছে। রাসেল তার মায়ের সাথে যেয়ে জেল গেটে রাসেলকে দেখেছে। রাসেল পিতার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শুধু মাত্র এই দেশের দুঃখী মানুষের মুক্তির জন্য পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তিনি জেল খেটেছেন। পাকিস্থানী বাহিনী বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে ৯ মাসে বন্দী করে রেখেছিল । সেখানে শিশু ও ৯ মাস আটক ছিল । দেশের জন্য তাকেও জেল খাটতে হয়েছে। একটি লাল সবুজের পতাকার রাস্ট্রে শেখ রাসেলের ও বেচে থাকার অধিকার ছিল। সেও একদিন দেশের জন্য কাজ করত। কিন্তু ঘাতকরা শিশু রাসেলকে বাচতে দিল না। রাসেল মা মা করে চিৎকার করে বলেছিল তোমরা আমাকে মেরো না আমার মায়ের কাছে নিয়ে চলো। কিন্তু ঘাতকরা শিশু রাসেল এর কোন কথা শুনল না। তারা রাসেলকে নিয়ে মায়ের লাশের কাছে নিয়ে হত্যা করল। সেদিন ১৫ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। আর ১৫ আগষ্টের হত্যা কারিদের কারো বিচার করা যাবে না এই মর্মে ইন্ডেনেমিটি আইন পাশ করা হলো। যারা হত্যা করেছিল তাদের পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দুতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

প্রধান অতিথি বলেন,জননেত্রী শেখ হাসিনার আকাশ চুম্বি উন্নয়নেকে তারা সহ্য করতে না পেরে আজ বিএনপি জামাতের লোকেরা নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।আজ বিধবা মায়েরা বিধবা ভাতা পাচ্ছে। বয়স্ক ভাতা, পঙ্গু ভাতা, মুক্তি যোদ্ধা ভাতা দিচ্ছে জাতির জনকের কন্যা। বছরের শুরুতে ৩৫ কোটি বই বিতরন করছে জাতির জনক এর কন্যা । এর সুবিধা পাচ্ছে সকল শ্রেনীর সকল রাজনৈতিক মানুষের ছেলে মেয়েরা। তিনি আরো বলেন, আগামি নির্বাচন হবে শার্শায় অত্যান্ত গুরুত্ব পুর্ণ এবং শত ভাগ নিরপেক্ষ। এই নির্বাচনে আমাদের জয়ী করতে হবে একজন সৎ এবং মানুষের পাশে থাকা মানুষকে। যিনি কোন সময় মানুষের ক্ষতি করে না। যিনি সব সময় মানুষের মঙ্গল কামনায় সামর্থ অনুযায়ী মানুষের পাশে থাকে।

যার প্রধান অতিথি সাবেক মেয়র লিটন বলেন,যে ছোট্ট শিশুকে কোন পাপ ষ্পর্শ করেনি, তাকেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা বাঁচতে দেয়নি। আজ শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে দেশ ও জাতিকে অনেককিছু দিতে পারতো।’ আজকে সারাদেশে জাতীয়ভাবে শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উদযাপিত হচ্ছে। আজকের এ দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ রাসেল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
তিনি বলেন, শিশু রাসেলের জীবন সম্পর্কে শিশু কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে তার জন্মদিনকে শেখ রাসেল দিবস হিহেবে ঘোষনা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ভাবে তৃতীয় বারের মতো আজ পালিত হচ্ছে শেখ রাসেল দিবস।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রা পাননি বঙ্গবন্ধুর এই শিশুপুত্র শেখ রাসেল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নরপিশাচেরা নিষ্ঠুরভাবে তাকেও হত্যা করেছিল। শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। শেখ রাসেলকে হত্যার মধ্য দিয়ে ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। রাসেল আজ বিশ্বে অধিকার বঞ্চিত শিশুদের প্রতীক ও মানবিক সত্তা হিসেবে সবার মাঝে বেঁচে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।‘শেখ রাসেল যদি বেঁচে থাকত, তাহলে হয়তো একজন মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আজ আমরা পেতাম, যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারত।’ তিনি বলেন, ‘শেখ রাসেল আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু আছে তার পবিত্র স্মৃতি। বাংলাদেশে সব শিশুর মধ্যে আজও আমরা রাসেলকে খুঁজে ফিরি। এই শিশুদের রাসেলের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। এমন এক উজ্জ্বল শিশুর সত্তা বুকে ধারণ করে বাংলাদেশের শিশুরা বেড়ে উঠুক। খুনিদের বিরুদ্ধে তারা তীব্র ঘৃণা বর্ষণ করুক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে তারা এগিয়ে আসুক আজ এই প্রত্যাশাই করি।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আহসান উল্লাহ মাষ্টার, শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ফজলুল হক বকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ইলিয়াছ আযম, দপ্তর সম্পাদক আজিবর রহমান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ কোরবান আলী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শেখ সারোয়ার, কোষাধ্যাক্ষ খোদাবক্স,  উপ-দপ্তর সম্পাদক সাধান গোস্বামী, পুটখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফফার সরদার, লক্ষনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম, নিজামপুর  ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বিপুল, উলাশি ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও কায়বা ইউপি চেয়ারম্যান আলতাফ হোসন,সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুহুল কবির ভুইয়া,বেনাপোল । অনুষ্টানে আরো উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা ছাত্রলীহের সাবে সহপভাপতি সাইদুজ্জামান কবির, যুবলীগ নেতা আছাদুজ্জামান হাই, কাজী আলামিন, আরিফুর রহমান, দিন ইসলাম, হারন অর রশিদ ইয়ানুর রহমান হৃদয়,সজিব হাসান বাপ্পী ছাত্র নেতা সাইফুল ইসলাম সজল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন যশোর জেলা আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের কার্যকরি সদস্য জাকির হোসেন আলম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.