স্টাফ রিপোর্টার,সিলেট অফিস : সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ঘুষবাণিজ্যতো আছে অব্যাহত, এবার ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে না পারায় লন্ডনগামী এক ভিজিটর যাত্রীর ভিসা বাতিল করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসান নামে ওসমানী বিমানবন্দরের এক ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী যাত্রীর নাম মোহাম্মদ ইয়াহদি সারওযার লিমন। তিনি আর যুক্তরাজ্যে আসতে পারেননি। তাঁর লন্ডন ভ্রমণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভিসা বাতিল হওয়ার কারণে তিনি আর্থিক ও মানসিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। লিমন জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের ইকরছই গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, মোহাম্মদ ইয়াহদি সারওয়ার লিমনকে ভিজিট ভিসার স্পনসর পাঠান যুক্তরাজ্যের বাকিংহ্যামশায়ারের হাই-উইকামের বাসিন্দা তাঁর ভাতিজি তানিয়া সীমা মিয়া। তিনি (লিমন) সিলেট ভিএফএস অফিসে (ভিসা সেন্টার) স্পনসরশীপের কাগজপত্র জমা দিয়ে যথা-নিয়মে ৬ মাসের মালটিপল ভিসা পান। এরপর যথারীতি (২৩ অক্টোবর) ২০২২২ইং রোববার লন্ডনের উদ্দেশ্যে
ফ্লাই করতে পাসপোর্ট, বিমান-টিকিট ও লাগেজসহ সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। বিমানের বোর্ডিং কার্ড নিয়ে ইমিগ্রেশন সেকশনে গেলে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হাসান তাঁর পাসপোর্টটি হাতে নিয়েই ১৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় যে ভাবে ভিসা বাতিল করা হলো লিমনের
বলেন,এই ভিসা জাল। তিনি প্রশ্ন করেন, আপনি কি কন্ট্রাক্টে (দালালের সাথে চুক্তি করে) লন্ডন যাচ্ছেন?” তখন লিমন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বুঝাতে চান তিনি কারো সাথে কন্ট্রাক্ট করে ভিসা পাননি। তার ভিসা তিনি স্পনসরশীপ জমা দিয়ে ভিসা সেন্টার থেকে তুলেছেন। তিনি তার দাবীর স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও প্রদর্শন করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কিছুতেই তা মানতে রাজি হননি। তিনি তাকে একপাশে বসিয়ে রাখেন। এরপর তার মোবাইল ফোনে অন্য একজন কর্মকর্তা কল করেন, যিনি বৃটিশ হাইকমিশন থেকে কথা বলছেন বলে জানান। তিনি তার ভিসার সত্যতা নিরূপন করতে অনেক প্রশ্ন করেন। তাঁর স্পনসরের নাম, যুক্তরাজ্যের ঠিকানাসহ নানা তথ্য জানতে চ্না। এরপর তার (লিমনের) বাড়ির ঠিকানা, দাদা ও দাদার বাবার নাম জানতে চান। তিনি সব গুলো প্রশ্নের উত্তর যথাযথ ভাবে দেন। কিন্তু ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি যেতে পারবেন না । এরপর তিনি নিরুপায় হয়ে যখন সেখানে বসে আছেন তখন ইমিগ্রেশন বিভাগেরই একজন লোক তার কাছে আসেন। তিনি কানে কানে বলেন, ‘আপনি বসে আছেন কেন ১৫ হাজার টাকা দিয়ে দেন, তাহলে আপনাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু তিনি বলেন, এই মুহুর্তে আমি ১৫ হাজার টাকা কোথা থেকে ব্যবস্থা করবো।
এদিকে ফ্লাইট ছেড়ে দেয়ার সময় ঘনিয়ে আসায় তিনি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হাসানকে বারবার অনুরোধ করেন তাঁকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু হাসান কিছুতেই তাকে ছেড়ে দিতে রাজি হননি। এসময় অন্য একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হাসানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তার ভিসা ঠিক আছে। তাকে আপনি ছেড়ে দিন। তখন হাসান রেগে গিয়ে ওই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে বলেন, আপনি কথা বলবেন না। আমি ভালো জানি। এরপর ফ্লাইট উড়ে যায়। কিন্তু লিমনকে আর যেতে দেওয়া হয়নি। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হাসান তার পাসপোর্টের শেষ পেইজে একটি সাংকেতিক নাম্বার বসিয়ে দেন। যাতে এই পাসপোর্ট দিয়ে তিনি আর ভ্রমণ করতে না পারেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যে লিমনের স্পনসরের আইনজীবী এ জেড ল অ্যাসোসিযেটস-এর ইমিগ্রেশন এডভাইজার ওয়াহিদ আলী বলেন, আমরা লিমনের স্পনসরের পক্ষে ভিজিট ভিসার ডকুমেন্ট ও আবেদন প্রসেস করি। সিলেট ভিসা সেন্টার এই স্পনসরশীপের ওপর ভিত্তি করে ভিসা ইস্যু করেছে। সব কিছুই জেনুইন। বর্তমানে সবকিছুই ডিজিটাল। এখানে জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু জানিনা কী কারণে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ভিসাটি বাতিল করে দিলেন। আমরা শুনেছি, ওই কর্মকর্তার পক্ষ থেকে নাকি ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করা হয়ে ছিলো। তিনি দিতে পারেননি বলে ভিসা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। সত্য মিথ্যা জানি না। তবে ওসমানী বিনমানবন্দরে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ আমরা হামেশা পেয়ে থাকি ।