রেলকে স্মার্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই-রেলমন্ত্রী

আশরাফুল আবেদীন,  ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম এমপি বলেছেন, আমরা চেষ্টা করছি লোক নিয়োগ করে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে রেলকে আধুনিকায়ন ও রেলপথ মন্ত্রণালয়কে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা। চেষ্টা চলছে রেলের সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন ও জনগণের কাছে সবচেয়ে সস্তা পরিবহণ হিসেবে গড়ে তোলার।
রেলমন্ত্রী আজ রবিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদী শহরের ফতেমোহাম্মদপুরে ৯৫ বছর আগে নির্মিত ’বাংলাদেশ রেলওয়ে ডিজেল লোকোমোটিভ রানিং সেড’ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক রেল মন্ত্রণালয়কে স্মার্ট বাংলাদেশের সজ্ঞার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা রেলকে সুন্দর ও সেবামুখি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, বিএনপি আমলে রেলের অনেক লোককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে চাকুরিচ্যুত করে জনবলের সংকট সৃষ্টি করা হয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি লোক নিয়োগ করে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে রেলকে আধুনিকায়ন এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়কে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা।
বক্তব্যের একপর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, ‘আপনরা সাংবাদিক মানুষ। আমি কালকে পাবর্তীপুর, সৈয়দপুরে যে কথাগুলো বলেছি তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। আপনারা তো সমাজের বিবেক। কথাগুলো যদি পজিটিভ ওয়েতে উপস্থাপন না করা হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু আমি মনে করবো যে আপনারা সহযোগিতা করছেন না। কিন্তু আমরা চাই আপনাদের সহযোগিতা। কারণ আপনারাও বাংলাদেশের নাগরিক, আমরাও বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সবাই দেশের উন্নয়ন চাই। সেক্ষেত্রে নেগেটিভ নিউজ করে উন্নয়ন আশা করা যায় না।’
মন্ত্রীর পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক পার্থ সরকার, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ডেন্ট আশাবুল ইসলাম, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী মমতাজুল ইসলাম, ঈশ্বরদী ডিজেল লোকোমোটিভ রানিং সেডের উর্ধ্বতন উপসহকারী (ইনচার্জ) মো. শাকের জামাল, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
এর আগে মন্ত্রী গতকাল শনিবার রাতে ট্রেনযোগে নাটোরের আব্দুলপুর জংসন স্টেশনে নামেন। সেখান থেকে তিনি ঈশ্বরদীর পাকশীতে এসে রাত্রি যাপন করেন। এরপর গতকাল রবিবার দুপুর সোয়া ১১টার দিকে তিনি সড়ক পথে ঈশ্বরদী শহরের ফতেমোহাম্মদপুর এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘ডিজেল লোকোমোটিভ রানিং সেড’ পরিদর্শনে আসেন। সেখানে পৌঁছালে বিভাগীয় রেল কর্মকর্তা, যান্ত্রিক প্রকৌশলী শাখার কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। মন্ত্রী এ সময় লোকোসেডের কয়েকটি ডকইয়ার্ডসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী দুপুরে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সদর দপ্তরে বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে রেলের উন্নয়নে বৈঠক করেন। বৈঠকে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য গালিবুর রহমান শরীফ উপস্থিত ছিলেন।
ঈশ্বরদী শহরের ফতেমোহাম্মদপুরে অবস্থিত এ স্থাপনা ব্রডগেজ রেলপথের ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় ডিজেল লোকোমটিভ রানিংসেড। ১৯২৯ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের লোকোসেড হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। তখন এখানে বাষ্পীয় ইঞ্জিন মেরামত হতো। ষাট ও সত্তরের দশকে যুক্ত হয় ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। পর্যায়ক্রমে এটি ডিজেল লোকোমোটিভ রানিং সেডে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এখান থেকে ১২৭টি ইঞ্জিন বিভিন্ন ব্রডগেজ রেলপথে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন নিয়ে চলাচল করেছে। আরও কয়েকটি ইঞ্জিন আমদানির অপেক্ষা রয়েছে। এখানে নির্দিষ্ট সময় পরপর এসব ইঞ্জিন মেরামত, ট্রেনে ইঞ্জিন সংযোজন, তেল পরিবর্তন ও পরিশোধন, রাবার পুনঃস্থাপন, ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ নানা কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয়। পাশাপাশি ইঞ্জিন ট্রেনে সংযুক্ত হওয়ার পর এখান থেকে চালক (ক্রু) সরবরাহ ও পরিচালনা করা হয়।
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের জন্য এখানে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে উদ্ধারকারী ট্রেন। গুরুত্ব বিবেচনায় ঈশ্বরদী লোকোসেড একটি কেপিআইভুক্ত স্থাপনা। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর রেলমন্ত্রী গতকাল রোববার দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনা পরিদর্শন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.